ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশসেরা কম্পিউটার ডিফেন্ডার টাঙ্গাইলের বিশ্বনাথ

মোজাম্মেল হক :
প্রকাশ: ১২:৪৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

যাত্রা পথে মোটরসাইকেলে পিছনে বসে ক্রিস দ্যা বার্গের কলিগুলোকে মনে হচ্ছিল অপার্থিব। সন্ধ্যা হয় হয় করছে। অনেক অব্যক্ত যন্ত্রণা নিস্তদ্ধ বেদনায় ছেয়ে ছেয়ে যায়। দৃষ্টি সন্তোষের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অগোছালো দোকানগুলির দিকে। কারন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকার কথা বর্তমান বাংলাদেশের দেশের সেরা ফুটবল ডিফেন্ডার টাঙ্গাইলের বিশ্বনাথের। ডিফেন্ডার হলেও তাকে সারা মাঠে দৌড়াতে দেখা যায়। যেখানেই ফুটবল, সেখানে বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথ যেন এ যুগের কম্পিউটার ডিফেন্ডার।

শুধু সাফল্য আর সাফল্য। ব্যর্থতা নামক শব্দটা এখন বিশ্বনাথের জীবন থেকে অন্তর্হিত হয়েছে। মাঠে নামলে তিনি যে নিজেকে অশ্বখে¦র ডালপালার মতো ছড়িয়ে দেবেনই, অনায়াস বিক্রম, একরাশ আত্ববিশ্বাস ও প্রবল ঔদ্ধতা নিয়ে চূর্নবিচূর্ণ করবেন প্রতিপক্ষের আক্রমনকে, এ যেন রাতের পর দিন আসার মতোই নিশ্চিত সূর্য-চন্দ্রের মতো বাস্তব।

টাঙ্গাইলের বাসিন্দা বিশ্বনাথ চন্দ্র ঘোষ বাংলাদেশের ফুটবলে লম্বা থ্রোর নতুন রাজা। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে তার মতো লম্বা থ্রো করার মতো ফুটবলার বিশ্বে বিরল। বিশ্বনাথ ঘোষ শুধু লম্বা থ্রোয়ার নয়, সে দক্ষ রক্ষণসেনা। আধুনিক কালে বিশ্বকে জয় করার কম্পিউটার ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ।

জাতীয় দল এবং বাংলাদেশ পেশাদার ফুটবল চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসে অপরিহার্য সদস্য বিশ্বনাথের শুরুটা হয়েছিলো টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে ফুটবলার তৈরী করার কারিগর মরহুম আতিকুর রহমান জামিলের হাত ধরে। ১৯৯৯ সালে ৩ মে টাঙ্গাইলের সন্তোষ ঘোষবাড়ীতে। এখানে তিনি তার শৈশব পাড় করেছেন। মা সন্ধ্যা ঘোষ চাইতেন না বিশ্বনাথ ফুটবল খেলুক। কিন্ত বাবা মৃত রাজেন চন্দ্র ঘোষ ছিলেন ফুটবল প্রেমী। তিনি চাইতেন বিশ্বনাথ ফুটবল খেলুক। তিনি চাইতেন বিশ্বনাথ ফুটবলে আলো ছড়াবে। বিশ্বনাথ বাবার আশা পূরণ করেছেন, কিন্তু তার বাবা দেখে যেতে পারেননি বিশ্বনাথের বিশ্বময় সাফল্য।

২০১২ সালে অনুর্দ্ধ ১৪ ফুটবল খেলতে বিশ্বনাথ তখন নেপালে। নেপালে যাওয়ার দুইদিন পর বিশ্বনাথের বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার খবরটা তাকে কেউ জানায়নি। ওই সময়ে নেপালের বিপক্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ছিলেন ৪ ঘন্টা। নেপাল ট্যুর শেষ হয়। তখনও তাকে তার বাবার মুত্যু সংবাদ দেওয়া হয়নি। খেলা শেষে দেশে আসার সময় তিনি জানতে পারেন এই হৃদয়বিদারক কথা। যা তার সারাজীবনের কষ্ট। বাবা নাই, মা ই তার এখন সব। ফুটবল খেলা অপছন্দ করা মা তার খেলা দেখে ছেলেকে নিয়ে খুশি।

২০১৮ সালের ১৪ই আগষ্ট এশিয়ান গেমসে অনুদ্ধ-২৩ দলের হয়ে উজবেকিস্থান ম্যাচে বিশ্বনাথের অভিষেক হয়। একই বছরে জাতীয় দলের হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ১৯ বছর বয়সে ভুটানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ২-০ গোলে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালে ভারতের বেঙ্গালুরে বসা সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে সেমিফাইনালে উঠলে তিনি মাঠে বসেই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেন।

২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারী নারায়নগঞ্জের চৈতি ঘোষের সাথে পারিবারিক ভাব বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ফুটবল কাপ চলার সময় কোচের কাছ থেকে ৩ ঘন্টার ছুটি নিয়ে বিয়ের কাজ সারতে নারায়নগঞ্জে চলে যান এবং বিয়ে করেন। বর্তমানে তার দুটি কন্যা সন্তান তিন্নি ও শ্রেয়া ঘোষ।

২৪ বছর বয়সী বিশ্বনাথ আরো ৭ থেকে ৮ বছর জাতীয় দলে খেলতে চান। পেশাদার ফুটবল লীগে যতদিন ফর্ম থাকবে, ততদিন তিনি খেলবেন। এর ইচ্ছে আছে টাঙ্গাইলের ফুটবল উন্নয়নে ভূমিকা রাখার। বিশ্বনাথ বলেন, ফুটবল খেলতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম করলেই সফলতা আসবেই। আর মাঠের শৃঙ্খলা মানলে ফুটবলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। টাঙ্গাইলের প্রতিভাবান ফুটবলার অনেক থাকলেও তার কাছে অনিক, মিশু, সৌরভ দেওয়ান ও রনি খেলা ভাল লাগে।

বিশ্বনাথের প্রিয় ফুটবলার চেলসির ইভানবিস এবং বাংলাদেশের নাসিরুল। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো সর্ম্পকে বলেন’ এলাকার বড় ভাই রায়হান টাঙ্গাইল এবং দেশের মধ্যে লম্বা থ্রো করতেন। রায়হানের লম্বা থ্রো দেখে তিনি লম্বা থ্রো করার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা পান। এছাড়া ফুটবলার হওয়ার পিছনে রায়হানের অবদান অনেক। ঘোষবাড়ীর মাঠে রাযহানই তাকে ফুটবলে প্রথম দীক্ষা দেন। তখন বিশ্বনাথ ৩য় শ্রেনীর ছাত্র। ২০০৯-১০ সালে ডানো নেসেস কাপ খেলতে যান অনিক ও সুমন রেজার সাথে। কোচ ছিলেন আব্দুল খালেক শিপন। শুরুতে গাজীপুর জোনে খেলতে গিয়ে রানার্সআপ হন। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকার যাত্রা।

বিশ্বনাথের প্রথম ফুটবল ক্লাব টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমী। এরপর ঢাকার ভিক্টোরিয়া। ১৫-১৬ সেশনে ঢাকা মোহামেডানে রাইটব্যাক পজিশনে। ১৬-১৭ সেশন থেকে বসুন্ধরা ক্লাবে। তার স্বরণীয় খেলা। ২০১৮ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে তার লম্বা খ্রো থেকে ডিফেন্ডার তপু বর্মন গোল করেন এবং খেলার মাঠে সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছেন সালে নেপালে সাফে খেলতে গিয়ে। প্রতিপক্ষ নেপালের সাথে ড্র করলে সেমিফাইনালে উঠা যায়, কিন্তু রেফারী ভুলের কারনে বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে যায়।

এম.কন্ঠ/ ০২ জুন /এম.টি

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশসেরা কম্পিউটার ডিফেন্ডার টাঙ্গাইলের বিশ্বনাথ

প্রকাশ: ১২:৪৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

যাত্রা পথে মোটরসাইকেলে পিছনে বসে ক্রিস দ্যা বার্গের কলিগুলোকে মনে হচ্ছিল অপার্থিব। সন্ধ্যা হয় হয় করছে। অনেক অব্যক্ত যন্ত্রণা নিস্তদ্ধ বেদনায় ছেয়ে ছেয়ে যায়। দৃষ্টি সন্তোষের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অগোছালো দোকানগুলির দিকে। কারন এখানেই দাঁড়িয়ে থাকার কথা বর্তমান বাংলাদেশের দেশের সেরা ফুটবল ডিফেন্ডার টাঙ্গাইলের বিশ্বনাথের। ডিফেন্ডার হলেও তাকে সারা মাঠে দৌড়াতে দেখা যায়। যেখানেই ফুটবল, সেখানে বিশ্বনাথ। বিশ্বনাথ যেন এ যুগের কম্পিউটার ডিফেন্ডার।

শুধু সাফল্য আর সাফল্য। ব্যর্থতা নামক শব্দটা এখন বিশ্বনাথের জীবন থেকে অন্তর্হিত হয়েছে। মাঠে নামলে তিনি যে নিজেকে অশ্বখে¦র ডালপালার মতো ছড়িয়ে দেবেনই, অনায়াস বিক্রম, একরাশ আত্ববিশ্বাস ও প্রবল ঔদ্ধতা নিয়ে চূর্নবিচূর্ণ করবেন প্রতিপক্ষের আক্রমনকে, এ যেন রাতের পর দিন আসার মতোই নিশ্চিত সূর্য-চন্দ্রের মতো বাস্তব।

টাঙ্গাইলের বাসিন্দা বিশ্বনাথ চন্দ্র ঘোষ বাংলাদেশের ফুটবলে লম্বা থ্রোর নতুন রাজা। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে তার মতো লম্বা থ্রো করার মতো ফুটবলার বিশ্বে বিরল। বিশ্বনাথ ঘোষ শুধু লম্বা থ্রোয়ার নয়, সে দক্ষ রক্ষণসেনা। আধুনিক কালে বিশ্বকে জয় করার কম্পিউটার ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ।

জাতীয় দল এবং বাংলাদেশ পেশাদার ফুটবল চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসে অপরিহার্য সদস্য বিশ্বনাথের শুরুটা হয়েছিলো টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে ফুটবলার তৈরী করার কারিগর মরহুম আতিকুর রহমান জামিলের হাত ধরে। ১৯৯৯ সালে ৩ মে টাঙ্গাইলের সন্তোষ ঘোষবাড়ীতে। এখানে তিনি তার শৈশব পাড় করেছেন। মা সন্ধ্যা ঘোষ চাইতেন না বিশ্বনাথ ফুটবল খেলুক। কিন্ত বাবা মৃত রাজেন চন্দ্র ঘোষ ছিলেন ফুটবল প্রেমী। তিনি চাইতেন বিশ্বনাথ ফুটবল খেলুক। তিনি চাইতেন বিশ্বনাথ ফুটবলে আলো ছড়াবে। বিশ্বনাথ বাবার আশা পূরণ করেছেন, কিন্তু তার বাবা দেখে যেতে পারেননি বিশ্বনাথের বিশ্বময় সাফল্য।

২০১২ সালে অনুর্দ্ধ ১৪ ফুটবল খেলতে বিশ্বনাথ তখন নেপালে। নেপালে যাওয়ার দুইদিন পর বিশ্বনাথের বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার খবরটা তাকে কেউ জানায়নি। ওই সময়ে নেপালের বিপক্ষে মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ছিলেন ৪ ঘন্টা। নেপাল ট্যুর শেষ হয়। তখনও তাকে তার বাবার মুত্যু সংবাদ দেওয়া হয়নি। খেলা শেষে দেশে আসার সময় তিনি জানতে পারেন এই হৃদয়বিদারক কথা। যা তার সারাজীবনের কষ্ট। বাবা নাই, মা ই তার এখন সব। ফুটবল খেলা অপছন্দ করা মা তার খেলা দেখে ছেলেকে নিয়ে খুশি।

২০১৮ সালের ১৪ই আগষ্ট এশিয়ান গেমসে অনুদ্ধ-২৩ দলের হয়ে উজবেকিস্থান ম্যাচে বিশ্বনাথের অভিষেক হয়। একই বছরে জাতীয় দলের হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ১৯ বছর বয়সে ভুটানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ২-০ গোলে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালে ভারতের বেঙ্গালুরে বসা সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে সেমিফাইনালে উঠলে তিনি মাঠে বসেই সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেন।

২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারী নারায়নগঞ্জের চৈতি ঘোষের সাথে পারিবারিক ভাব বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এ সময় বঙ্গবন্ধু ফুটবল কাপ চলার সময় কোচের কাছ থেকে ৩ ঘন্টার ছুটি নিয়ে বিয়ের কাজ সারতে নারায়নগঞ্জে চলে যান এবং বিয়ে করেন। বর্তমানে তার দুটি কন্যা সন্তান তিন্নি ও শ্রেয়া ঘোষ।

২৪ বছর বয়সী বিশ্বনাথ আরো ৭ থেকে ৮ বছর জাতীয় দলে খেলতে চান। পেশাদার ফুটবল লীগে যতদিন ফর্ম থাকবে, ততদিন তিনি খেলবেন। এর ইচ্ছে আছে টাঙ্গাইলের ফুটবল উন্নয়নে ভূমিকা রাখার। বিশ্বনাথ বলেন, ফুটবল খেলতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম করলেই সফলতা আসবেই। আর মাঠের শৃঙ্খলা মানলে ফুটবলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। টাঙ্গাইলের প্রতিভাবান ফুটবলার অনেক থাকলেও তার কাছে অনিক, মিশু, সৌরভ দেওয়ান ও রনি খেলা ভাল লাগে।

বিশ্বনাথের প্রিয় ফুটবলার চেলসির ইভানবিস এবং বাংলাদেশের নাসিরুল। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো সর্ম্পকে বলেন’ এলাকার বড় ভাই রায়হান টাঙ্গাইল এবং দেশের মধ্যে লম্বা থ্রো করতেন। রায়হানের লম্বা থ্রো দেখে তিনি লম্বা থ্রো করার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা পান। এছাড়া ফুটবলার হওয়ার পিছনে রায়হানের অবদান অনেক। ঘোষবাড়ীর মাঠে রাযহানই তাকে ফুটবলে প্রথম দীক্ষা দেন। তখন বিশ্বনাথ ৩য় শ্রেনীর ছাত্র। ২০০৯-১০ সালে ডানো নেসেস কাপ খেলতে যান অনিক ও সুমন রেজার সাথে। কোচ ছিলেন আব্দুল খালেক শিপন। শুরুতে গাজীপুর জোনে খেলতে গিয়ে রানার্সআপ হন। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকার যাত্রা।

বিশ্বনাথের প্রথম ফুটবল ক্লাব টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমী। এরপর ঢাকার ভিক্টোরিয়া। ১৫-১৬ সেশনে ঢাকা মোহামেডানে রাইটব্যাক পজিশনে। ১৬-১৭ সেশন থেকে বসুন্ধরা ক্লাবে। তার স্বরণীয় খেলা। ২০১৮ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে তার লম্বা খ্রো থেকে ডিফেন্ডার তপু বর্মন গোল করেন এবং খেলার মাঠে সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছেন সালে নেপালে সাফে খেলতে গিয়ে। প্রতিপক্ষ নেপালের সাথে ড্র করলে সেমিফাইনালে উঠা যায়, কিন্তু রেফারী ভুলের কারনে বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে যায়।

এম.কন্ঠ/ ০২ জুন /এম.টি