প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত॥ বেতন ভাতা বন্ধ
এমপিওভুক্ত স্কুলের কেরানী হলেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি
টাঙ্গাইল সদর উপজেলাধীন অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আলী হোসেন ও তার বাহামভুক্ত কতিপয় শিক্ষক ও সদস্য নিরিহ শিক্ষক কর্মচারীদের জিম্মি করে প্রধান শিক্ষককে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে নিয়মিত কমিটি গঠনের উদ্যোগ না নিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় স্কুল পরিচালনা করছেন। ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হক। দীর্ঘদিন বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই শিক্ষক।
ফজলুল হককে ১ বৎসর যাবত বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত করে আসছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা বিষয়ক স্থানীয় ও জাতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সয়া-চাকতা গ্রামের অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে অভ্যন্তরীন গোলযোগের কারণে দীর্ঘ ০৭ বছর প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার পর বিগত ১৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের গোলড়া গ্রামের সৈয়দ ফজলুল হক ফণি প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর দক্ষতা ও নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে স্কুল পরিচালিত হওয়ায় অর্থ লিপ্সু ও পদলোভী কতিপয় শিক্ষক ও এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তি এক হয়ে তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হককে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত রেজুলেশনের পাতা ছিঁেড় ফেলা, আয়-ব্যয়ের হিসাব ও নথি পত্র বুঝিয়ে না দেওয়া, সাবেক সভাপতি মো. আলি হোসেন এবং আব্দুল খালেক গং প্রধান শিক্ষককে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দামকি দেয়া ফজলুল হক টাঙ্গাইল থানায় একটি জিডি করেন (জিডি নং টাং-৬২১,১০০৮)।
প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হক জানান, কমিটি অডিট করার নামে নথিপত্র গায়েব করার উদ্দেশ্যে প্রধান শিক্ষক অফিসে বসে অডিট না করে নথিপত্র সভাপতির বাড়িতে নিয়ে সেখানে বসে অডিট করার সিন্ধান্ত নেয় বিধায় তিনি নথিপত্র হস্তান্তর করেন নাই। এ ব্যপারে কমিটি বল প্রয়োগ করিলে প্রধান শিক্ষক জেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে টাঙ্গাইল সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং তথ্য গোপন করে সভাপতি মো. আলী হোসেন এর সভাপতির পদ চ্যালেঞ্জ করে এবং তার অর্থনৈতিক দূর্নীতি উল্লেখ করে চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের নামে গোটবাড়ি মৌজায় বর্গাচাষী কর্তৃক দখলকৃত ২৪৭ শতাংশ জমি দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে দায়েরকৃত মামলা (৪০/২০২২ স্বত্ব) তদবির না করে খারিজ করে দেয় এই কমিটি। ইহাতে সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হককে বরখাস্ত করার লক্ষ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ১২ টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে শোকজ করেন। প্রধান শিক্ষক যথা সময়ে নোটিশের জবাব প্রদান করেন কিন্ত অভিযোগের বিষয়বস্তু দূর্বল হওয়ায় ১২ দফা অভিযোগের সাথে আরো ০৫ দফা মিথ্যা অভিযোগ যুক্ত করে ১৭ দফার অভিযোগের দ্বিতীয় নোটিশ প্রদান করে। প্রধান শিক্ষক যথাসময়ে দ্বিতীয় নোটিশের জবাব প্রদানের পূর্বেই কমিটি সকল প্রকার বিধি বিধান লঙ্ঘন, অকার্যকর তদন্ত কমিটি গঠন এবং শুনানী না করেই বিগত বছরের ২৬ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে সকল প্রকার বেতন ভাতা অধ্যাবদি বন্ধ করে রাখে। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিগত ২৬ জুন হতে অবৈধ ভাবে চুড়ান্ত বরখাস্তের নোটিশ প্রদান করে। প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক সাময়িক বরখাস্ত, চুড়ান্ত বরখাস্ত ও সভাপতির পদের বৈধতার বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং জেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক আলাদা ভাবে ২ টি তদন্ত করে তদন্ত রিপোর্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করেন। তদন্ত রির্পোটে দেখা যায় সভাপতি মো. আলী হোসেন নারায়নগঞ্জ গনবিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিও ভুক্ত কেরানী বিধায় তিনি সভাপতি পদে থাকতে পারেন না। অপরদিকে তদন্ত কমিটি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হকের বরখাস্তকরণ সম্পূর্ন অবৈধ এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সমূহ ভিত্তিহীন অনুধাবন করে তাকে হেনস্তা ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার লক্ষ্যে সভাপতি মো. আলী হোসেন বিগত ১২ জুলাই ২০২৩ সালে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আমলি আদালত টাঙ্গাইলে বিদ্যালয় তহবিল হতে ৩৮ লাখ ৩ হাজার ২৭১ টাকা আত্মোসাতের মামলা (সিআর-১২৫৪/২৩) দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই এর উপর অর্পিত হয়।
পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি পর্যালোচনা করে বিবাদী কে হেনস্তা ও উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে করা হয়েছে মর্মে মতামত পেশ করেন। উক্ত রিপোর্টে বাদী সন্তুষ্ট হতে না পেরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে প্রেরণ করা হয়। বিগত ০৬ আগস্ট ২০১৭ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় যুগ্ম সচিব সালমা জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানা যায় মহামান্য হাই কোর্ট ডিভিশন এর রিট পিটিশন নং ৩৬৫৭/২০১৫ এর রায়ে বেসরকারী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শিক্ষককে ৬০ দিনের বেশী সাময়িক বরখাস্ত রাখা হলে তিনি বেতন ও অন্যান্য ভাতা সমূহ প্রাপ্ত হবেন।
৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে মাননীয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মাননীয় বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের অপর এক রায়ে বরখাস্ত করার দিন হতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগ নিস্পতি করতে হবে অন্যথায় বরখাস্ত বাতিল হয়ে যাবে এবং ঐ শিক্ষক আপনা আপনি স্বপদে বহাল হয়ে যাবে। অথচ প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হক দীর্ঘ এক বছরের বেশী সময় ধরে বরখাস্ত হয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ তিনটি তদন্তের মাধ্যম্যে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অথচ আক্রোশের বশভর্তী হয়ে কমিটি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হককে বরখাস্ত করে রেখেছে।
দূস্কৃতিকারী কর্তৃক প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হক কে রাত্রিবেলা অপহরন করে গুম করার চেষ্টা করা হয়। প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ফজলুল হক কর্তৃক বিদ্যালয়ের আইন শৃঙ্খলা ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ তাকে হেনস্থা করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকতো।
এ ব্যাপারে অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. আলী হোসেন বলেন, আমি কোন স্কুলের কেরানী ছিলাম না। আমি কোন চাকুরী করিনি। বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এখন আর বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নেই। কমিটির মেয়াদ চলে গেছে গত ৫ মে ২০২৪ইং। তাই আমি এ বিষয়ে আর কোন মন্তব্য করতে চাই না।
এম.কন্ঠ/ ০৯ মে /এম.টি