এলেঙ্গা শামছুল হক মহাবিদ্যালয় কলেজের জমি প্রতারণা করে অধ্যক্ষের যোগসাজশে লিখে নিয়েছেন স্ত্রী মীনা
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা শামছুল হক মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ারুল কবিরের বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম ও দুর্নিতীর অভিযোগ উঠেছে। সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে দুর্নিতীতে জড়িয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এমনকি কলেজের জমি নিজের স্ত্রীর নামে দলিল করারও অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ১৯৭২ সালের ২০ অক্টোবর এলেঙ্গা শামছুল হক মহাবিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল হাকিম তালুকদার। সে সময় স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বিকৃতি লাভ করে প্রতিষ্ঠানটি। আওয়ামী মুসলিমলীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শামছুল হকের নামে এটির নামকরণ করা হয়। কলেজটি ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছর পহেলা মে কলেকজি প্রথম এমপিওভুক্ত করা হয়।
২০১৬ সালে এলেঙ্গা শামছুল হক মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন মোঃ আনোয়ারুল কবির। যোগদানের পর থেকেই কলেজের পরিচালনা পরষদের সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার মোল্লার সাথে আতাত করে কলেজে নিয়োগ বানিজ্য শুরু করেন। ২০১৮ সালে কলেকটি পুরোপুরি সরকারি করণ করা হয়। এজন্য ওই বছর নিয়ম অনুযায়ী সরকারকে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ারুল কবির কলেজের সম্পত্তির সকল কাগজপত্র ও দাগ নম্বরসহ সরকারের সাথে চুক্তিপত্র করেন। এরপর থেকে শুরু করেন শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালিন আওয়ামী লীগ নেতাদের দাপট দেখিলে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় প্রায় কোটি টাকা। এছাড়া প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলামের জন্য সরকারি নির্ধারিত ফি’র বাইরেও নেওয়া হয় দ্বিগুন টাকা।
এছাড়া প্রতারনার মাধ্যমে ২০১৯ সালে অধ্যক্ষের জমির পাশে কলেজের থাকা ৭৯৬ দাগের চার শতাংশ জমিও তার (অধ্যক্ষ) নিজের স্ত্রী মিনা বেগমের নামে আরেক জনকে দিয়ে দলিল করে নিয়েছেন। এরপর পুরো জমির উপর ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে চালতলা ভবন সম্পন্ন করেছেন অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবির। এছাড়া ৯২৪ দাগের ২৪ শতাংশ এবং ৯২৬ দাগের ৫০ শতাংশ জমি সায়েম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির দখলে রয়েছে। তবে সেই সায়েম উদ্দিনের কাছ থেকেও অধ্যক্ষ এবং সভাপতি মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে ২০১৮ সালে কলেজটি সরকারি করনের সময় এই জমি অধ্যক্ষ নিজে সরকারকে লিখে দিয়েছেন। এই একই দাকের জমি কিভাবে তার স্ত্রী কিনে নিলেন এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের কয়েজন শিক্ষক জানান, প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। আর এ টাকার অধ্যক্ষ, কলেজের সভাপতিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা ভাগাভাগি করে নেন। তৎকালিন সরকারের সময় ওইসব নেতাদের দাপনে মুখ খুলতেও সাহস করতো না কেউ। বর্তমানেও একই অবস্থা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষক জানান, যে জমি ২০১৮ সালে অধ্যক্ষ নিজে সরকারের কাছে লিখে দিলেন কিন্তু সেই জমি পরের বছর কিভাবে তার স্ত্রী কিনে নিলেন এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আবার সেই জমি উদ্ধার তো দূরের কথা নিজের স্ত্রীকে দিয়েই কলেজের নামে মামলা করিয়েছেন অধ্যক্ষ আনোয়ারুল কবির।
এ বিষয়ে এলেঙ্গা শামছুল হক মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল কবির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ভিডিও বক্তব্যে বলেন, তিনি কোন অনিয়ম করেননি। তার কলেজের পাশে চার শতাংশ জমি তার স্ত্রী স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে একটু একটু করে কিনেছেন। এছাড়া কলেজের নামে ৭৪ শতাংশ জমি রয়েছে সেটি বর্তমানে অবৈধ দখলে রয়েছে। সেটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এম.কন্ঠ/ ০৭ সেপ্টেম্বর /এম.টি