ঢাকা ০৫:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ
ওয়ান ক্লাবের সাথে গোলশূন্য ড্র করলো হ্যানডেট ক্লাব টাঙ্গাইলে জেলা পর্যায়ে ওয়ার্ডমাস্টার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ টাঙ্গাইলে শীতের রাতে আলোকিত ব্যাডমিন্টন খেলা কালিহাতীতে ভোটারদের মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানীর জন্মবার্ষিকী পালিত ঘাটাইলে মোটরসাইকেল কেড়ে নিল কলেজ শিক্ষার্থীর প্রাণ টাঙ্গাইলে নিরাপত্তাজনিত কারনে সাবেক কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাকে আদালতে তোলা হয়নি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের নবাগত কমিটির সাথে জেলা বিএনপির মতবিনিময় সভা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন টাঙ্গাইলে দীর্ঘ ১৭ বছর পর হানাদার মুক্ত দিবস পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধাদল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ তালহা চিকিৎসার অভাবে ধুকছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ০২:০৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

oppo_2

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে টাঙ্গাইলে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অধিকাংশ আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছে। অনেকে আবার চিকিৎসার অভাবে ধুকছে। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতায় গুলিবিদ্ধ আহতদের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা না পেলে এসব আহত শিক্ষার্থীরা পঙ্গুত্ব বরণ করবে অথবা অকালে মারা যাবে। এদের মধ্যে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার খন্দকার তালহা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বেড়াবুচনা সবুজবাগ এলাকায় খন্দকার আশরাফ আলীর ছেলে খন্দকার তালহা (১৭)। তিনি শহরের হাজী আবুল হোসেন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। তারা এক ভাই এক বোন। ৫ আগস্টে ভাই বোন মিলে টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে। ওই দিন শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ছুড়ে মারে তখন পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তালহা দৌড়ে আশ্রয় নেয় পাশে থাকা একটি ৪তলা ভবনের ছাদে। পিছু নেয় পুলিশ। তখন পুলিশের গুলিতে আহত হন তালহা। তাৎক্ষণিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি দৌড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করলে সহপাঠীদের সহায়তায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বাম পায়ের ভিতর গুলির সিসা ও ইস্পাত জাতীয় ধাতব নিয়েই বাড়িতে অবস্থান নেন তালহা।

গুলিবিদ্ধ তালহা বলেন, এতো বড় বিপদে প্রথম পড়েছিলাম। ওই দিন আমার বুকে যখন পুলিশ বন্দুক ঠেকিয়ে বলে গুলি করে দিবো। তাই কোন ধিক না পেয়ে বন্দুকটি বুকে থেকে সরানোর জন্য ধস্তাধস্তি হলে এক পর্যায়ে বাম পায়ে গুলি লাগে। তারপরও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের কাছে থেকে দৌড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করলে সহপাঠীরা এসে সহযোগিতা করেন।

গুলিবিদ্ধ তালহার বোন সুমাইয়া আফরোজ বলেন, ভাই বোন মিলে আন্দোলনের অংশগ্রহণ করি। আন্দোলনের একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আমার ভাই যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ওই সময় সেটি জানতাম না। বাড়িতে আসার পর সহপাঠীরা আমাকে জানায় আমার ভাই গুলিবিদ্ধ ।

আহত তালহার মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। আমার দুটি সন্তান নিয়ে সংসার। আমি বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে ৩ হাজার টাকা পাই। তা দিয়েই সংসার চালাই। কিভাবে আমার সন্তানকে চিকিৎসা করাবো। ধার দেনা করে এপর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা শেষ করেছি। আমার হাতে আর কোনো টাকা-পয়সা নেই। এখনো তার পায়ের বড় অপারেশন বাকি রয়েছে।

আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বাপের ভিটে বাড়িতে থাকি। আমার সন্তান আন্দোলনের গিয়ে আহত হয়েছে। ৬দিন হাসপাতালে থেকে টাকার অভাবে পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা না করে ছুটি নিয়ে চলে আসি। ছেলের পায়ে গুলির কিছু সিসা জাতীয় ধাতব পায়ের ভেতরেই রয়ে গেছে। চিকিৎসক বলেছে, অপারেশন করে সেগুলো বাহির করতে হবে। ডাক্তারের কাছে না নিয়ে মেয়ে এবং আমি দুজন মিলে ছেলের পা মাঝে মাঝে বায়োডিন দিয়ে ধুইয়ে দেই। আর ব্যাথা নাশক ঔষধ খাওয়াই ।

তিনি বলেন, কোন বিত্তবান ব্যাক্তি অথবা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই আমার ছেলেকে সহযোগিতা করুন। যদিও আমার ছেলে সম্ভবত আগের মত আর স্বাভাবিক হবে না। তবু ছেলে যদি নিজে একা একা নড়াচড়া করতে পারে সেই আশা নিয়ে সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, ছেলের গুলিবিদ্ধ পায়ে আঙুল একটি চলে গেছে। বাবা হারা সন্তান নিয়ে আমি ছেলেকে বুকে আগলিয়ে রাখতে চাই। আমার বুকের মানিক তালহাকে আপনারা সহায়তা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেতে সবার সহযোগিতার আশা করছি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীম বলেন, বাবা ছাড়া সংসারের দায়দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র মা। আমরা খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। আসলে টানাটানির সংসারে গুলিবিদ্ধ ছেলেটা অসহায় হয়ে পড়ছে । আশেপাশের মানুষ দুই চারশ টাকা দেয় সেটি দিয়ে ব্যাথার ঔষধ কিনতে ফুরিয়ে যায়। তার পা ঠিক হতে গেলে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা লাগবে। এই টাকা পরিবারের পক্ষে সম্ভব না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ইফফাত রাইসা নূহা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আহত বা শহীদ যারা হয়েছেন তাদের বাসায় যাচ্ছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি। আরও যাবো। আমরা সমন্বয়করা আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ যা সহযোগীতা প্রয়োজন তা করার আশ্বাস দিয়েছি। প্রশাসন আমাদের কথা দিয়েছে তারা আহতদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন সবকিছুতে আমাদের পাশে থাকবে। আমরা তাদের উপর আস্থা রাখছি।

 

এম.কন্ঠ/ ১৮ অগাস্ট  /এম.টি

নিউজটি শেয়ার করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ তালহা চিকিৎসার অভাবে ধুকছে

প্রকাশ: ০২:০৩:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে টাঙ্গাইলে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশ, সাংবাদিকসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে অধিকাংশ আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছে। অনেকে আবার চিকিৎসার অভাবে ধুকছে। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতায় গুলিবিদ্ধ আহতদের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা না পেলে এসব আহত শিক্ষার্থীরা পঙ্গুত্ব বরণ করবে অথবা অকালে মারা যাবে। এদের মধ্যে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার খন্দকার তালহা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

টাঙ্গাইল পৌর এলাকার বেড়াবুচনা সবুজবাগ এলাকায় খন্দকার আশরাফ আলীর ছেলে খন্দকার তালহা (১৭)। তিনি শহরের হাজী আবুল হোসেন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্র। তারা এক ভাই এক বোন। ৫ আগস্টে ভাই বোন মিলে টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে। ওই দিন শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ছুড়ে মারে তখন পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তালহা দৌড়ে আশ্রয় নেয় পাশে থাকা একটি ৪তলা ভবনের ছাদে। পিছু নেয় পুলিশ। তখন পুলিশের গুলিতে আহত হন তালহা। তাৎক্ষণিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি দৌড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করলে সহপাঠীদের সহায়তায় তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বাম পায়ের ভিতর গুলির সিসা ও ইস্পাত জাতীয় ধাতব নিয়েই বাড়িতে অবস্থান নেন তালহা।

গুলিবিদ্ধ তালহা বলেন, এতো বড় বিপদে প্রথম পড়েছিলাম। ওই দিন আমার বুকে যখন পুলিশ বন্দুক ঠেকিয়ে বলে গুলি করে দিবো। তাই কোন ধিক না পেয়ে বন্দুকটি বুকে থেকে সরানোর জন্য ধস্তাধস্তি হলে এক পর্যায়ে বাম পায়ে গুলি লাগে। তারপরও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের কাছে থেকে দৌড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করলে সহপাঠীরা এসে সহযোগিতা করেন।

গুলিবিদ্ধ তালহার বোন সুমাইয়া আফরোজ বলেন, ভাই বোন মিলে আন্দোলনের অংশগ্রহণ করি। আন্দোলনের একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। আমার ভাই যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে ওই সময় সেটি জানতাম না। বাড়িতে আসার পর সহপাঠীরা আমাকে জানায় আমার ভাই গুলিবিদ্ধ ।

আহত তালহার মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। আমার দুটি সন্তান নিয়ে সংসার। আমি বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে ৩ হাজার টাকা পাই। তা দিয়েই সংসার চালাই। কিভাবে আমার সন্তানকে চিকিৎসা করাবো। ধার দেনা করে এপর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা শেষ করেছি। আমার হাতে আর কোনো টাকা-পয়সা নেই। এখনো তার পায়ের বড় অপারেশন বাকি রয়েছে।

আমার স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। বাপের ভিটে বাড়িতে থাকি। আমার সন্তান আন্দোলনের গিয়ে আহত হয়েছে। ৬দিন হাসপাতালে থেকে টাকার অভাবে পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা না করে ছুটি নিয়ে চলে আসি। ছেলের পায়ে গুলির কিছু সিসা জাতীয় ধাতব পায়ের ভেতরেই রয়ে গেছে। চিকিৎসক বলেছে, অপারেশন করে সেগুলো বাহির করতে হবে। ডাক্তারের কাছে না নিয়ে মেয়ে এবং আমি দুজন মিলে ছেলের পা মাঝে মাঝে বায়োডিন দিয়ে ধুইয়ে দেই। আর ব্যাথা নাশক ঔষধ খাওয়াই ।

তিনি বলেন, কোন বিত্তবান ব্যাক্তি অথবা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই আমার ছেলেকে সহযোগিতা করুন। যদিও আমার ছেলে সম্ভবত আগের মত আর স্বাভাবিক হবে না। তবু ছেলে যদি নিজে একা একা নড়াচড়া করতে পারে সেই আশা নিয়ে সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি আরও বলেন, ছেলের গুলিবিদ্ধ পায়ে আঙুল একটি চলে গেছে। বাবা হারা সন্তান নিয়ে আমি ছেলেকে বুকে আগলিয়ে রাখতে চাই। আমার বুকের মানিক তালহাকে আপনারা সহায়তা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পেতে সবার সহযোগিতার আশা করছি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী হাসান আলীম বলেন, বাবা ছাড়া সংসারের দায়দায়িত্ব পালন করছেন একমাত্র মা। আমরা খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। আসলে টানাটানির সংসারে গুলিবিদ্ধ ছেলেটা অসহায় হয়ে পড়ছে । আশেপাশের মানুষ দুই চারশ টাকা দেয় সেটি দিয়ে ব্যাথার ঔষধ কিনতে ফুরিয়ে যায়। তার পা ঠিক হতে গেলে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা লাগবে। এই টাকা পরিবারের পক্ষে সম্ভব না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইলের সমন্বয়ক ইফফাত রাইসা নূহা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আহত বা শহীদ যারা হয়েছেন তাদের বাসায় যাচ্ছি। খোঁজ খবর নিচ্ছি। আরও যাবো। আমরা সমন্বয়করা আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ যা সহযোগীতা প্রয়োজন তা করার আশ্বাস দিয়েছি। প্রশাসন আমাদের কথা দিয়েছে তারা আহতদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন সবকিছুতে আমাদের পাশে থাকবে। আমরা তাদের উপর আস্থা রাখছি।

 

এম.কন্ঠ/ ১৮ অগাস্ট  /এম.টি