যমুনা রেলসেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল
প্রমত্ত্বা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা রেলওয়ে সেতু দিয়ে মঙ্গলবার সফলভাবে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল) ট্রেন চালানো হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দেশের দীর্ঘতম ওই রেলসেতুর ওপর দিয়ে এদিন সকাল ৯ টা ৪২ মিনিটে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে যায়।
আবার সিরাজগঞ্জ প্রান্ত থেকে অপর একটি ট্রেন টাঙ্গাইল প্রান্তে আসে। সেতুর মাঝামাঝি স্থানে একটি ট্রেন অপর ট্রেনকে অতিক্রম করে। আগামি জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রেলসেতুটি চালু হলেও ট্রেনের পূর্ণ গতি পেতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সেতু সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ট্রেনের তিনটি বগি নিয়ে একটি ইঞ্জিন সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে যায়। পরে ট্রেনটি ১০টা ৪১ মিনিটে পুনরায় পূর্বপাড়ে ফিরে আসে। সিরাজগঞ্জ প্রান্ত থেকে অপর একটি ট্রেন একটি ইঞ্জিন ও তিন বগি নিয়ে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে পূর্ব প্রান্তে আসে এবং ১০টা ২৯ মিনিটে পশ্চিম প্রান্তের দিকে যাত্রা শুরু করে। পরীক্ষামূলক ট্রেন দুটি প্রথমে ১০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করলেও পরে ৪০ কিলোমিটার বেগে চালানো হয়।
রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে যমুনার ওপর নির্মিত যমুনা বহুমুখী সেতুতে যে মিটারগেজ রেললাইন রয়েছে- তাতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭০ কিলো-নিউটন/মিটার ওজন বহন করা সম্ভব। তাই ট্রেনে বেশি বগি যুক্ত করার সুযোগ নেই। এছাড়া এক লাইনের সীমাবদ্ধতা থাকায় বেশি ট্রেন চালানোও সম্ভব নয়। মাত্র ২০ কিলোমিটার গতিতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু পাড় হতে ২৫ মিনিট লেগে যায়। দুই পাড়ের স্টেশনে সিগন্যালের জন্য ট্রেনগুলোকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে মাত্র ৫ কিলোমিটার পাড়ি দিতে লাগে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। আগামি জানুয়ারিতে যমুনা রেলসেতু উদ্বোধন হলে এ রুটে গড়ে সময় বাঁচবে এক ঘণ্টা। ক্রসিংয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।
দেশের বৃহত্তর যমুনা রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, সেতুটির কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। আগামি জানুয়ারিতে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। তবে মঙ্গলবার সকালে রেলওয়ে সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, নতুন এই রেলসেতু দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও সিবিআইএসের কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪২-৪৪ শতাংশ। এ পদ্ধতি চালু করতে আগামি জানুয়ারির প্রথম সপ্তায় সেতু উদ্বোধন হওয়ার পরে আরও দু-তিন মাস লাগতে পারে।
তিনি আরও জানান, এছাড়া সিগন্যাল সিস্টেম সাধারণত স্টেশনে থাকে- সেতুতে তো আর থাকেনা। তাই গতি পেতে তেমন কোন সমস্যা হবেনা। আগামি মার্চ মাসের শেষ দিকে কম্পিউটার ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সংকেত ব্যবস্থা বা কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) চালু করা সম্ভব হবে। আপাতত প্রথাগত নন-ইন্টারলিঙ্ক ব্যবস্থায় ট্রেন চালাতে হবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে যমুনা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এর ব্যয় তখন ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ দশমিক ৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকায়। এর ১২ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ কোটি টাকা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ হিসেবে দিয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। কিন্তু প্রথম সংশোধনে এ সময়সীমা ডিসেম্বর ২০২৪ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।
এম.কন্ঠ/ ২৬ নভেম্বর /এম.টি