টিআরসি পদে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ
টাঙ্গাইলে ১২০ টাকায় স্বপ্নপূরণ করলো ১০৫ জন
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া গ্রামের স্বপ্না আক্তার। তার বাবা কৃষি কাজ ও মা একটি স্কুলের দপ্তরির চাকরি করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছে। দুই ভাই ও তিনি খুব কষ্ট করে মানুষ হচ্ছেন। পরিবারে অভাব অনটনের মাঝেও তিনি এসএসসি পাশ করেছেন। বুধবার বিকেলে টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়ে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিলো মানুষের সেবা করার। কিন্তু সেবা করার সময় থাকলেও অর্থ না থাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় না। তবে পুলিশে চাকরি করলে সহজেই মানুষ ও দেশের সেবা করা যায়। তাই পুলিশ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো। তবে বিনা ঘুষে ১২০ টাকায় আমার স্বপ্ন পূরণ হবে তা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। আমি বিনা ঘুষে মানুষের সেবা করার জন্য সকলের দোয়া চাই।
শুধু স্বপ্না আক্তার নয়, তার মতো টাঙ্গাইলের ১০৫ জনের ১২০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন নারী রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট (টিআরসি) পদে ছয় হাজার ৩১৯ জন আবেদন করে। শারিরীক পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয় ৮১১ জন। ৩৬১ জন ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে ১০৫ জন উত্তীর্ণ হয়। বুধবার বিকেলে ফলাফল প্রকাশ হলে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে জড়িতে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে।
ফলাফল প্রকাশের সময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বিপিএম সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা, মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার, গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সরকারি ফি দিয়ে নিয়োগ পাওয়া সদর উপজেলার করটিয়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম শ্রাবন বলেন, এতো দিন জানতাম ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। আজকে ১২০ টাকা চাকরি পেয়ে সেটি ভুল প্রমাণ হলো। বিনা ঘুষে চাকরি দেয়ায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
ভূঞাপুরের বাগবাড়ি গ্রামের নাজমুল ইসলাম বলেন, বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো আমি একটি পুলিশ হবো। সেই ইচ্ছা শক্তি থেকেই পুলিশের আবেদন করেছিলাম। আমার চাকরি পেতে কাউকে কোন ঘুষ দিতে হয়নি। আমার মা বেঁচে থাকলে বাবার মতো তিনিও খুব খুশি হতেন। আমি দায়িত্ব পালনের সময় কারো কাছ থেকে কোন ঘুষ নেবো না। পুলিশের ধর্মই হচ্ছে শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দেয়া।
ভূঞাপুরের নিকলা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, সেবা দিতেই পুলিশে যোগদান করেছি। তবে উৎকচ ছাড়া যে সরকারি চাকরি নেয়া যায় আমি তার জীবন্ত উদাহারণ। নিয়োগ কমিটির কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বিপিএম সেবা বলেন, নিয়োগে অনিয়ম রোধে সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছে। নিয়োগে কোনো অবৈধ লেনদেন বা স্বজনপ্রীতি হয়নি।
এম.কন্ঠ/ ২০ নভেম্বর /এম.টি