টাঙ্গাইলের ভূমি অফিস গুলোতে দালালের দৌরাত্ম বন্ধ না হওয়ায় ভোগান্তি
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে দালাতের দৌরাত্ম বন্ধ না হওয়ায় সাধারণ মানুষের সেবা নিতে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও কাঙ্খিত সেবা নিতে গুনতে হচ্ছে ঘুষের টাকা। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার দালাল নির্মুলের উদ্যোগ নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগ থাকায় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সেবা গ্রহীতারা।
কর্মকর্তারা জানান, নামজারি/খারিজ আবেদনের ২৮ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করার বিধান থাকলেও কাগজপত্রে জটিলতা থাকলে সেক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। স্বাভাবিক সময়ে মাসে এক হাজার নামজারির মঞ্জুর ও না মঞ্জুরের আবেদন পরলেও মাঝখানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারনে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান আবার নামজারি আবেদন পত্র জমা বাড়ছে।
সরেজমিন চলতি সপ্তাহের রোববার ও মঙ্গলবার সদর উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক জন দালাল ঘুরাঘুরি করছে। সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে।
দালালদের মধ্যে একজন মো. মাইন বলেন, ছয় শতাংশ হোক আর ২৫ শতাংশ জমি হোক নামজারি ফি সব সমান। বাড়তি টাকা খরচ না করলে মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর ঘুরতে হবে। আমাকে সব মিলিয়ে আট হাজার টাকা দিলে ২০ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে নামজারি করে দিতে পারবো। আমার বন্ধু এই অফিসের সুলতান মাহমুদের মাধ্যমে দীর্ঘ দিন যাবত এখানে কাজ করি। যে কারনে আমার কাজে কোন ভোগান্তি নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক কর্মচারি বলেন, ইউনিয়নে কাজ করেন আর উপজেলায় কাজ করেন। বাড়তি টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতেই হবে। সরকার পরিবর্তন হলেও ভূমি অফিস গুলোর নিয়ম পরিবর্তন হয়নি। অফিসের পুরুষ বলেন আর নারী বলেন টাকা ছাড়া তারা কোন কাজই করতে চায় না।
সেবা নিতে আসা কাগমারা এলাকার আব্দুল লতিফ বলেন, অনলাইনে আবেদন করে দেড় মাস যাবত ঘুরতেছি। কবে আমার খারিজ হবে তাও তো সুনির্দিষ্ট করে বলে না। আর কত দিন ঘুরতে হবে তাও জানি না।
আয়নাপুর থেকে আসা সেবা গ্রহীতা মো. নাজিম বলেন, দেড় মাস আগে আবেদন করেছি। মঙ্গলবার অফিসে এসে দেখি আমার কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেবা গ্রহীতা বলেন, আমি নামজারি আবেদন করার পর দুই ঘুরেও কাঙ্খিত সেবা পাইনি। পরে এই অফিসের সাইফুল ইসলামের কাছে সাত হাজার টাকা দিয়ে সেবা নিয়েছি।
অ্যাসিল্যান্ড অফিসের হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম অ্যাকাউনটেন্ট সুলতান মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার কোন দুর্নীতি বা ঘুষের সাথে জড়িত নয়। যে কোন সেবা গ্রহীতাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. রুহুল আমিন শরিফ বলেন, ১১৭০ টাকা খরচ করে অনলাইনের মাধ্যমে নামজারির আবেদন করতে হয়। কাগজ পত্র যাচাই বাচাই করে আবেদন মঞ্জুর বা না মঞ্জুর হতে পারে। আমার অফিস পাবলিক অফিস। যারা আসেন কারো গায়ে সাধারণ কৃষক, চোর, বাটপার, টাউট, দালাল, চিটার, ধান্দাবাজ কিছুই লেখা থাকে না। যারা আসেন সবাই মানুষ। বাইরের লোকের দায়বদ্ধতা আমার নয়। আবার অফিসের লোক টাকা নিলে সেই দায়বারও আমার না। যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে নামজারি করতে হয়, তাই কেউ যদি দালালের খপ্পরে পরে তাহলে দায়বার ওই সেবা গ্রহীতার।
তিনি বলেন, নামজারির জন্য কোন সেবা গ্রহীতার অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। তবে নোটিশ করলে অ্যাসিল্যান্ডের সাথে সাক্ষাত করতে আসতে পারে। অন্য কারো সাথে কথা বলার সুযোগ নেই। আমি এই অফিসে যোগদানের পর যত গুলো নামজারির আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করেছি তার প্রত্যেকটির ব্যাখা আছে।
তিনি আরও বলেন, কোন সেবা গ্রহীতা দালাল ধরলে তার ব্যর্থতা। দালাল নির্মুলের আগে নাগরিকদের সচেতন করতে হবে। যিনি ঘুষ নেন তার কাছে সেবা গ্রহীতারা কেন যান। সেবা গ্রহীতাদের কোন কাজ থাকলে সরাসরি অ্যাসিল্যান্ডের সাথে যোগাযোগ করবে। বেসিক জিনিস না জানা নাগরিকদের অপরাধ। ইতিবাচক সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বেসিক জিনিস জানার পরামর্শ দেন তিনি।
এম.কন্ঠ/ ১৮ সেপ্টেম্বর /এম.টি