ঢাকা ০২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ
ঘাটাইলে পাহাড়ি লাল মাটি কাটার দায়ে একজনের জেল গ্রামে গ্রামে ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন দেশের হাজার বছরের ধর্মীয় সংস্কৃতি…ফরহাদ ইকবাল কোরআনের আলোকে সত্য কথা বললেও হাসিনা আলেমদের মামলা দিতো…শাকিল উজ্জামান ঘাটাইলে সাগরদিঘী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ গ্রেপ্তার ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত ঘাটাইলে অন্বেষা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সভা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের নবাগত কমিটিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানালো উইমেন্স চেম্বার কালিহাতীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর বিল থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার বিগত নির্বাচনে আ.লীগ ও পুলিশলীগ সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারী টাঙ্গাইলে জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

গোপনে মীমাংসার তোড়জোড়

মধুপুরে চিপসের প্রলোভনে আদিবাসী শিশু ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ০৩:১৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

oppo_2

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চিপসের প্রলোভন দেখিয়ে এক আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি পক্ষ ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ভেদুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা করার কথা রয়েছে। এরআগে মামলার পর মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন ধর্ষিতার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ভেদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষাথীদের কয়েকজন গত ৭ নভেম্বর(বৃহস্পতিবার) ভেদুরিয়া গ্রামের সেলেশটিন নকরেকের বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল। খেলার এক ফাঁকে সেলেশটিন নকরেকের ছেলে মিশর ডিউ(২৫) ছয় বছরের এক নারী শিশু শিক্ষার্থীকে চিপস দেওয়ার কথা বলে তার ঘরে ডেকে নেয়। অত:পর ওই নারী শিশু শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরে পড়নের কাপড় খুলে তাকে ধর্ষণ করে। ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলে পড়নের হাফপ্যাণ্টে রক্ত দেখে তার মা জানতে চাইলে শিক্ষার্থী তার মায়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরে তার মা সেলেশটিন নকরেকের কাছে তার ছেলে মিশর ডিউয়ের কুকর্মের কথা জানায়। ওই সময়ই মিশর ডিউ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা পরিবার ও বংশের লোকজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে।

পরামর্শের এক পর্যায়ে দুলাল কুবি নামে এক মাতব্বর বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। পরে ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় নামকাওয়াস্তে সামাজিক বৈঠক বসায়। বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ধর্ষিতার পরিবার শুক্রবার(৮ নভেম্বর) মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মধুপুর থানায় গত সোমবার (১১ নভেম্বর) অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে।

ধর্ষিত ওই নারী শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিন সদস্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আরএস(গাইনী) চিকিৎসক ডা. সাদিয়া সিদ্দিকাকে সভাপতি এবং মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. নাসরিন সুলতানাকে সদস্য এবং মেডিকেল অফিসার ডা. আবিদা সুলতানাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ডা. সাদিয়া সিদ্দিকা জানান, ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে- এরপর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যাণ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিলে বুধবার সন্ধ্যায় মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে।

ওই নারীশিশুর মা (স্বর্ণা মৃ) ও বাবা (রাসেল সিমসাং) জানান, সেলেশটিন নকরেক তাদের প্রতিবেশি ও সম্পর্কে চাচা। তার ছেলে মিশর ডিউ বখাটে প্রকৃতির ছেলে। চিপস দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মেয়েকে ডেকে ঘরে নিয়ে মিশর ডিউ মুখ চেপে ধরে নির্মমভাবে পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তারা মিশর ডিউয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আমরুশ সিমসাং জানান, খবর শুনে তিনি ওই নারীশিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলেছেন এবং পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি জানান, আদিবাসীদের নিয়মানুযায়ী পারিবারিকভাবে তারা মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কোন মীমাংসা হয়নি। পরে তারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরিষদে সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল- সেই আলোচনার মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন।

স্থানীয় মাতব্বর দুলাল কুবি এ বিষয়ে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। বিষয়টি সমাধানের জন্য আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী মাহারাং(শনিপুজা) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ‘মাহারাং’ অনুষ্ঠান করে তারা অভিযুক্ত মিশর ডিউকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। পরে ধর্ষিতার পরিবার থানায় মামলা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।

মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির জানান, শিশু ধর্ষণের বিষয়ে বাবা রাসেল সিমসাং বাদি হয়ে থানায় মিশর ডিউকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন ধষিত শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

 

এম.কন্ঠ/ ১৩ নভেম্বর /এম.টি

নিউজটি শেয়ার করুন

গোপনে মীমাংসার তোড়জোড়

মধুপুরে চিপসের প্রলোভনে আদিবাসী শিশু ধর্ষণ

প্রকাশ: ০৩:১৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চিপসের প্রলোভন দেখিয়ে এক আদিবাসী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি পক্ষ ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ভেদুরিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ওই শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা করার কথা রয়েছে। এরআগে মামলার পর মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন ধর্ষিতার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ভেদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষাথীদের কয়েকজন গত ৭ নভেম্বর(বৃহস্পতিবার) ভেদুরিয়া গ্রামের সেলেশটিন নকরেকের বাড়ির আঙিনায় খেলা করছিল। খেলার এক ফাঁকে সেলেশটিন নকরেকের ছেলে মিশর ডিউ(২৫) ছয় বছরের এক নারী শিশু শিক্ষার্থীকে চিপস দেওয়ার কথা বলে তার ঘরে ডেকে নেয়। অত:পর ওই নারী শিশু শিক্ষার্থীর মুখ চেপে ধরে পড়নের কাপড় খুলে তাকে ধর্ষণ করে। ওই শিক্ষার্থী বাড়িতে গেলে পড়নের হাফপ্যাণ্টে রক্ত দেখে তার মা জানতে চাইলে শিক্ষার্থী তার মায়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে। পরে তার মা সেলেশটিন নকরেকের কাছে তার ছেলে মিশর ডিউয়ের কুকর্মের কথা জানায়। ওই সময়ই মিশর ডিউ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেয়। ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা পরিবার ও বংশের লোকজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে।

পরামর্শের এক পর্যায়ে দুলাল কুবি নামে এক মাতব্বর বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। পরে ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় নামকাওয়াস্তে সামাজিক বৈঠক বসায়। বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ধর্ষিতার পরিবার শুক্রবার(৮ নভেম্বর) মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মধুপুর থানায় গত সোমবার (১১ নভেম্বর) অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে।

ধর্ষিত ওই নারী শিশুর শারীরিক পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিন সদস্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। হাসপাতাল গঠিত মেডিকেল বোর্ডে আরএস(গাইনী) চিকিৎসক ডা. সাদিয়া সিদ্দিকাকে সভাপতি এবং মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. নাসরিন সুলতানাকে সদস্য এবং মেডিকেল অফিসার ডা. আবিদা সুলতানাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

মেডিকেল বোর্ডের সভাপতি ডা. সাদিয়া সিদ্দিকা জানান, ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে- এরপর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যাণ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিলে বুধবার সন্ধ্যায় মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে।

ওই নারীশিশুর মা (স্বর্ণা মৃ) ও বাবা (রাসেল সিমসাং) জানান, সেলেশটিন নকরেক তাদের প্রতিবেশি ও সম্পর্কে চাচা। তার ছেলে মিশর ডিউ বখাটে প্রকৃতির ছেলে। চিপস দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মেয়েকে ডেকে ঘরে নিয়ে মিশর ডিউ মুখ চেপে ধরে নির্মমভাবে পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তারা মিশর ডিউয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

শোলাকুড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আমরুশ সিমসাং জানান, খবর শুনে তিনি ওই নারীশিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলেছেন এবং পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি জানান, আদিবাসীদের নিয়মানুযায়ী পারিবারিকভাবে তারা মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু কোন মীমাংসা হয়নি। পরে তারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী জানান, এ বিষয়ে কেউ তাকে জানায়নি। বিষয়টি নিয়ে পরিষদে সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল- সেই আলোচনার মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন।

স্থানীয় মাতব্বর দুলাল কুবি এ বিষয়ে জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। বিষয়টি সমাধানের জন্য আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী মাহারাং(শনিপুজা) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পরে ‘মাহারাং’ অনুষ্ঠান করে তারা অভিযুক্ত মিশর ডিউকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। পরে ধর্ষিতার পরিবার থানায় মামলা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।

মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির জানান, শিশু ধর্ষণের বিষয়ে বাবা রাসেল সিমসাং বাদি হয়ে থানায় মিশর ডিউকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. রুমি খাতুন ধষিত শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। শিশুটির মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

 

এম.কন্ঠ/ ১৩ নভেম্বর /এম.টি