আন্দোলনে যাওয়া কালিহাতীর শাহাদতের এক মাসেও সন্ধান মেলেনি
টাঙ্গাইলের কালিহাতীর শাহাদত হোসেন ৪ আগস্ট ঢাকার শাহবাগ এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। ছেলেকে পেতে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পায়নি পরিবার। বার বার থানায় গেলেও অভিযোগ নেয়নি পুলিশ দাবি পরিবারটির।
এদিকে শাহাদত হোসেনের সন্ধান না পাওয়ায় ৫মাসের কন্যা সন্তানের ভরণপোষণ ও ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার স্ত্রী। শাহাদতের সন্ধান, পরিবারটির পাশে বিত্তশালী ও সরকারকের দাড়ানোর আহ্বান এলাকাবাসী। আর ইউএনও বলছে ছেলেটিকে খুঁজে পেতে আমাদের চেষ্টা চলছে।
নিখোঁজ শাহাদতের ৫মাস বয়সী কন্যা শিশু সানজিদা। এরই মধ্যে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত ১মাসেরও বেশি সময় ধরে। আর কোন দিন বাবার আদর পাবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। বাবা না থাকায় এই শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মা জিয়াসমিন।
গত ৩আগস্ট ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনে যোগ দিতে বন্ধুদের সাথে বাড়ি ছাড়েন টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আলীপুর এলাকার আব্দুল হালিম ও আসমা খাতুন দম্পতির একমাত্র ছেলে শাহাদত হোসেন। ৪আগস্ট দুপুরে সবশেষ অন্যের নম্বর থেকে মাকে ফোন করে জানান শাহবাগ থানা এলাকায় আন্দোলনে আছেন তিনি। এখানে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে। এরপর থেকে আর সন্ধান পাওয়া যায়নি শাহাদতের। যে নম্বর দিয়ে ফোন করেছেন সেটিও বন্ধ রয়েছে। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গেও তার সন্ধান মেলেনি।
শাহাদতের স্ত্রী জিয়াসমিন জানান, পেশায় বেকু গাড়ি চালক ছিলো সে। বেকু গাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় যাচ্ছে শুনে শাহাদতকে ফিরে আসতে বলেন স্ত্রী জিয়াসমিন। তবে শাহাদত ফিরে না এসে আন্দোলনে যোগ দেন। এরপর থেকে সে নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে ৫মাসের শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জিয়াসমিন। স্বামীকে জীবিত অথবা মৃত একনজরে দেখতে চান তিনি।
শাহাদতের মা আসমা খাতুন জানান, ৩আগস্ট সন্ধায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় শাহাদত। পরের দিন ৪আগস্ট দুপুরে অন্যের নম্বর থেকে ফোন করে জানান আন্দোলনে আছে সে। এখানে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে। এরপর থেকে ওই নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আসমা খাতুন।
শাহাদতের বাবা আব্দুল হালিম জানান, শাহাতদের নানা বাড়ির লোকজন বিএনপি সমর্থিত হওয়ায় সেও বিএনপির লোকজনের সাথে চলাচল করতো। ৩আগস্ট বিএনপির লোকজনের সাথেই ঢাকায় আন্দোলনে যোগ দিতে রওনা হয়। ৪আগস্ট থেকে ছেলের সন্ধান না পেয়ে কালিহাতী থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি না নিয়ে কোন মেয়েলি ঘটনায় জরিয়ে থাকতে পারে বলে জানান। পরে সেখান থেকে চলে এসে ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পাইনি।
এলাকাবাসী জানান, শাহাদতের বিরুদ্ধে এলাকায় কোন অভিযোগ নেই। সে খুব মিশুক প্রকৃতির লোক ছিলো। শাহাদাতের ৩ ভাই বোনের মধ্যে সেই বড়। ছোট ২বোন রয়েছে। তার ৫মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সে নিখোঁজ থাকায় শিশুটিকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শাহাতদের স্ত্রী। সরকার ও বৃত্তশালীদের এই পরিবারের পাশে দাড়ানোর আহ্বান এলাকাবাসীর।
সম্প্রতি কালিহাতী থানার ওসি বদলি হওয়ার তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। আর কালিহাতী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেছেন, খবর পেয়ে ওই পরিবারকে ডেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইতিমধ্যেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। নিখোঁজ শাহাদতকে খুঁজে পেতে আমাদের চেষ্টা চলছে।
এম.কন্ঠ/ ১৮ সেপ্টেম্বর /এম.টি