হারিকেনের নিভু নিভু আলোর মতো চলছে নাগরপুরের রাজিয়া সিনেমা হল
হারিকেনের নিভু নিভু আলোর মতো চলছে ১৯৯৬ সালে স্থাপিত নাগরপুরের রাজিয়া সিনেমা হল। ২৮ বছর পর ডিজিটাল যুক্ত হয়ে এখন ডিজিটাল রাজিয়া সিনেমা হল। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মেইন রোডের পাশে অবস্থিত ডিজিটাল রাজিয়া সিনেমা হল।
টাঙ্গাইল জেলায় যে কয়টা প্রেক্ষাগৃহ বা সিনেমা এখনো ধুঁকে বুঁকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, একটা মধুপুরের মাধবী অন্যটি নাগরপুরের ডিজিটাল রাজিয়া সিনেমা। হলটির বর্তমান অবস্থা কী? কী ছবি চলছে? দর্শকের উপস্থিতি কেমন? এসব জানতে ঈদের পর সাকিব খানের তুফান দেখতে গিয়েছিলাম। দেখা হলো, কথা হলো ডিজিটাল রাজিয়া সিনেমা হলের মালিক আমিনুর রহমান আমিনের সাথে।
এ মুর্হুতে হলটিতে চলছে ‘ তুফান’ চলচ্চিত্র। গত ঈদ আযহা থেকে এই মুর্হুতে তুরুন যুবকের পছন্দের ছবি, সাকিব খানের ছবি তুফান চলছে। অন্য সিনেমার তুলনায় তুফান ছবির দর্শক অনেক ভীড়। তুফানের মতো সিনেমা পেলে সিনেমার ব্যবস্থা ভালো মতোই চলবে এটা হল মালিকের দৃঢ বিশ্বাস। ২০২০ সালের মহামারী কারণে প্রায় দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ ছিলো। জেলা শহরে ৫টি সিনেমা হল ছিলো। যা এখন হারিয়েছে গেছে। রওশন সিনেমা হল এখন সিডিসি কমপ্লেক্স্র, মালঞ্চ সিনেমা হল এখন মালঞ্চ টাওয়ার, কেয়া সিনেমা হল এখন টিনের সারি সারি দোকান, রুপসী সিনেমা হল এখন রুপসী টাওয়ার এবং জীর্ন শীর্ণ ভাবে মেইন রোডে বন্ধ অবস্থায় দাঁিড়য়ে আছে রুপবানী সিনেমা হল।
যা এক যুগের পর বেশী সময় হলো বন্ধ। জানা গেছে এখানে আর সিনেমা হল নয়, হয়ত বসবাসের জন্য বড় ইমারত এবং সাথে মার্কেট নিমার্ণ হবে। ডিজিটাল রাজিয়া সিনেমা হলের মালিক আমিনুর রহমান আমিনের সাথে কথা হলো। তার সাথে কথা বলে জানা গেল প্রায় ২৮ বছর আগে স্নেহের বাঁধন সিনেমা দিয়ে তার বাবা আব্দুর রশীদ অনেক আশা নিয়ে ৭ শতাংশ জমিতে সিনেমা হলটি চালু করেছিলেন। তার বাবা এখন নেই। চার ভাইয়ের বড় ভাই আমিন বাবার ব্যবসাটা ধরে রেখেছেন। ব্যবসা বললে ভুল হবে, ব্যবসায় লাভ ক্ষতির হিসাব আছে, কিন্তু বর্তমানে সিনেমার ব্যবসায় লাভ নেই,শুধু ক্ষতি আর ক্ষতি।
সিনেমার ভালোবাসায় পড়ে এখনও সিনেমা হলটি ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, সাকিব খানের সিনেমা হলে কিছু লাভ হয়। বাকী নায়ক নায়িকাদের ছবি দেখতে দর্শক আসে না। তখন সিনেমা হলটি তেল ফুরিয়া যাওয়া হারিকেনের আলোর মতো চলে। যা আয় হয়, তার সাথে কিছু যোগ করে সিনেমার হলের তিন জন কর্মচারীদেও বেতন দেওয়া হয়। সিনেমা হলে প্রবেশ করতে গেলে দু’পাশের ৫টি দোকান থেকে ১০,০০০ টাকা ভাড়া দিয়ে অতি কষ্টে সংসার চালান। সংসারে স্ত্রীসহ দুই মেয়ে। একজন কলেজে পড়ে অন্যটি ৮ম শ্রেনীতে পড়ে।
নাগরপুর উপজেলায় একসময় বানী চিত্র ও ফাল্গুনী নামে আরো ২টি সিনেমা হল ছিল। যা এখন হারিয়ে গেছে। নাগরপুর উপজেলার সিনেমা প্রেমী ফারুক বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকে সময় পেলে সিনেমা দেখতাম। আমাদের সময় আমাদের বিনোদন ছিলো মাঠে খেলাধূলা, রেডিওতে গান শোনা, বিটিভিতে সপ্তাহে একদিন নাটক ও মাসে একদিন সিনেমা। তাই বাধ্য হয়ে বিনোদনের জন্য এই হলগুলিই ছিলো সিনেমা দেখার বড় মাধ্যম। এখানকার মতো তখনকার যুগে মোবাইল ছিলো না। একটা স্ম্রার্ট মোবাইল ফোন থাকলে একজন মানুষ একাই নিরিবিলি সময় কাটাতে পারে। তখন আমরা সময় কাটাতে একা কিংবা বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতাম।
ঈদের দিন কিংবা বিশেষ দিনে সিনেমা হলে প্রচন্ড ভীড় ঠেলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কাটতাম। কাউন্টারে টিকিট না পেলে ব্ল্যাকে টিকিট একটু বেশী দামে পাওয়া যেত। সেই দিনের স্মৃতিগুলো আজ বেশী মনে পড়ে!”। ডিজিটাল রাজিয়া সিনেমা হলের মালিক আমিনুল রহমান আমিন বলেন, ভালো গল্পসহ ভালো সিনেমা মুক্তি পেলে, বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে এখনও দর্শক আসবে। এছাড়া হলের পরিবেশ সুন্দর থাকলে দর্শকের কমতি হবে না। সরকারী ভাবে আমরা সহযোগিতা পেলে সিনেমা শিল্প ধরে রাখতে পারবো।
এম.কন্ঠ/ ১৮ অগাস্ট /এম.টি