স্মার্টফোনে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে এবং পড়ালেখায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে মোবাইল, বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করছেন চিকিৎসক, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
তারা মনে করেন, অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে আসক্তি শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সীদের জন্যই চরম স্বাস্থ্যহানির কারণ। পাশাপাশি মোবাইল আসক্তির কারণে পড়ালেখায়ও মনোযোগ নেই তাদের। এতে করে তারা শিশু-কিশোররা ভবিষ্যতে জাতির জন্য বোঝা হয়ে উঠবে। বাড়বে বেকারত্ব। সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদরের আনাচে কানাছে এখন শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন। অনেক শিক্ষার্থী সারারাত থাকছে ফোন। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার জনজীবনে গতিশীলতার পাশাপাশি অতিব্যবহারের কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিশু থেকে বয়ঃজ্যৈষ্ঠ সব বয়সীদের মাঝে স্মার্টফোন আসক্তি এখন চরম পর্যায়ে। শিশু-কিশোরেরা বাড়িতে পড়ার টেবিলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মুঠোফোনেই সময় বেশি ব্যয় করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং বিভিন্ন ধরণের গেম দৈনন্দিন কাজের গুরুত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। শিশুরা পর্নোসাইডে ঢুকে পড়ছে, অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
খেলাধুলা মানেই স্বাস্থ্য সচেতনা। এখানে মোবাইলের আসক্তি প্রবেশ করেছে। যারা খেলোয়াড়ী জীবনকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা এ্যাথলেটিক্স অনুশীলন করে। যে সব খেলোয়াড়দের পড়াশোনায় একটু ব্যাঘাত হয়। স্বাভাবিকের তুলনায় ওরা বেশী পড়াশোনা করতে পারে না। তবে এসব খেলোয়াড়দের মাঝে স্মার্টফোন ব্যবহারে আসক্তি দেখা যাচ্ছে। মাঠে খেলাধূলা আর বাড়ীতে স্মার্টফোনের ব্যবহার। পড়ালেখা তখন কিচ্ছু হয় না। এই সব খেলোয়াড় যদি সঠিক ট্র্যাকে খেলাধূলা উন্নতি করতে না পারে তাহলে পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকায় জীবন গঠনে সারাজীবন পিছনেই থাকবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ ক্রীড়াবিদরা যাদের টাকা আছে তারা বাধ্য হয়ে বিদেশে পারি জমায়। খেলাধুলায় যারা জীবন গড়তে চায়, তাদের এ বিষয়ে ভাবনার বিষয়।
স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিকসমূহঃ বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। (১) ব্রেইন টিউমারঃ ইতালি ফিনল্যান্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ব্রেইন টিউমারে ঝুঁিক বৃদ্ধি পায়। (২) ডিএনএ এর গঠন পরিবর্তনঃ প্রায় ৩ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিশেনের ফলে ডিএনএ এর স্ট্রাকচারে পরিবর্তন ঘটে, যা জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। (৩) ক্যান্সারঃ নেদারল্যান্ডের গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোনের রেডিয়েশন ক্যান্সারের ঝুঁিক বাড়ায়।
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাবঃ অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ডোপমিন ক্ষরণের মাত্রা যাড়ে, যা আস্তে আস্তে আসক্তিতে পরিণত হয়। কয়েক মাস ব্যবহারের পর, মস্তিস্ক অন্য কোনো উৎস থেকে একই মাত্রার ডোপমিন পায় না, ফলে এক ধরনের অস্বস্থি তৈরি হয় এবং পুনরায় স্মার্টফোন ব্যবহার না করা পর্যন্ত স্বস্থি ফিরে আসে না।
মার্টিন কুপার(প্রথম হ্যান্ডহেন্ড সেলুলার মোবাইল ফোনের আবিস্কারক) বলেছেন, ৫% এর বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাই উত্তম। অর্থাৎ যদি একজন ব্যক্তি দৈনিক ১৬ ঘন্টা জাগ্রত থাকে, তবে মাত্র ৪৮ মিনিট মোবাইল ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পড়াশোনার সময় মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন চেক করলে পূর্বের ফোকাস ফিরে পেতে গড় ২৩ মিনিট সময় লাগে। দিন দিন শিশু-কিশোরদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে এবং সব বয়সের মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। গবেষকদের মতে, উপমহাদেশের মানুষদের রাত ৯.৪৫ থেকে ১০.১৫ এর মধ্যে ঘুমানো উচিত। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে অধিকাংশ মানুষ এই রুটিন মানতে পারছে না, যা স্বাস্থ্যগত ভারসাম্যহীনতা ও আনপ্রোডাক্টিভ জীবনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাত্রি জাগরনের দ্বারা পড়া মনে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যেহেতু পড়াশোনা গুলো আমাদের ব্রেইন এর শর্ট টার্ম মেমোরি থেকে লং টার্ম মেমোরিতে যেতে একটা ইফেক্টিভ ঘুমের প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাত দিয়েছেন ঘুমের মাধ্যমে বিশ্রামের জন্য, দিন দিয়েছেন কাজের জন্য। কিন্তু অধিকাংশ শিশু-কিশোর, মাঝবয়সি এমন কি ৫০ উর্ধ্ব লোকও রাত ১২টার আগে ঘুমোতে যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে মানুষ বিশ্রামের পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না।
দেশ টিভির এক প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা ৩৭%, হৃদরোগের ঝুঁকি ৪৫%, ভ্রণের উপর নেতিবাচক প্রভাব ২১%, শ্রবণশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা ৮০%
সামাজিক ও মানসিক প্রভাবঃ
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে, অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, মানসিক রোগের ঝুঁিক বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সৃজনশীল চিন্তাশক্তি কমে যাচ্ছে। বই পড়ার মাধ্যমে মস্তিস্কেও উচ্চ বিকাশ ঘটে। বিপরীতে অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলা বা চলচ্চিত্র দেখার ফলে মস্তিস্কের একটি একটি নির্দিশ অংশ ধীরে ধীওে সংকুচিত হতে থাকে। এটি কোনে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, যা সহজে অনুভব করা যায় না।
পরিস্থিতি এতটাই সংকটপূর্ন যে, বর্তমান সময়ে ৯০% এর বেশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়তো ভিডিও গেমের প্রতি আসক্ত, নয়তো অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের বাস্তব জগতে মনোযোগ নেই; তারা স্মার্টফোনের মাধ্যমে এক কল্পনার জগতে বাস করছে। এমনকি যখন অভিভাবকরা তাদের খাওয়ার জন্য ডাকেন, তখন তারা বিরক্তিবোধ করে, রাগান্বিত হয়ে ওঠে।
এছাড়া মোবাইল ব্যবহারে অল্প বয়সেই প্রেমপত্র লেখা শিখে সেটা দ্রুত প্রয়োগ করছে। এরা কলেজে উঠার আগেই অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের গোপন ছবি শেয়ার করছে তার পার্টনারকে, যা পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছে, কেউ কেউ আত্নহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে।
কেউ হয়তো বলবে, স্মার্টফোন ছাড়াও এ ধরনে ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ৩০ বছর আগেও এসব ঘটনা বিরল ছিল।স্মার্টফোন ব্যবহারে শিশু-কিশোরদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। কারণ তারা সহজাতভাবেই প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে এবং এর ফলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদুর রহমান তুহিন বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগ, কম্পিউটারের যুগ এবং পরিবর্তিত বিশ^ ব্যবস্থাপনায় মোবাইল একটা অপরিহার্য বস্তু, যা আমাদের নিজেদের একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু ছেলেমেয়েরা এই মোবাইলকে খারাপ ভাবে ব্যবহার করছে। একটা পরিবারের কর্তাব্যক্তি যদি ভালো শিক্ষিত না হয় বা সচেতন না হয় তাহলে ছেলেমেয়েরা নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক।
এখন করোনাকালে অনলাইন ক্লাসের প্রয়োজনে এন্ড্রোয়েভ মোবাইল সেটটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো এটার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। আস্তে আস্তে শিশু থেকে কিশোররা খারাপ পথে চলে যায়। নানান ধরনের কুরুচি পূর্ন ভিডিও, টিকটক, ভিডিও গেম দেখে তাদের সময় কেটে যায়। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা নেতিবাচক আসক্তিতে চলে গিয়েছে। এখান থেকে উত্তরণে উপায় শিক্ষক, অভিভাবকদের পক্ষে অনেকাংশে সম্ভব নয়। এটাকে সরকার যদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে দেন এবং যে ভিডিও এবং গেম ক্ষতিকর সেগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। ছাত্রছাত্রীরা এন্ডোয়েভ মোবাইলে রাত্রি জেগে পরদিন স্কুল কলেজে আসে না। লেখাপড়া বিমুখ হয়েছে। তাদের চিন্তাচেতনা মোবাইলের দিকে চলে যায়। সে স্বাধীনভাবে কিছু চিন্তা করতে পারে না। দুইয়ের সাথে দুই যোগ করতে দিলে এরা মোবাইল ক্যালকুলেটর ছাড়া যোগ করতে পারে না। আমি মনে করি ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনে বাটনফোনটা শুধু ব্যবহার করা যেতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ডোয়েভ ফোন নিষিদ্ধ এটা সরকারের জোরালোভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো সামনের প্রজম্ম চরম ক্ষতিগ্রস্থ বা অর্থব হবে।
ড. আলী রেজা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যাপকভাবে মোবাইল ব্যবহার করে থাকি। এটা এখন শিশু কিশোরদের মাঝে ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। এরা রাত জেগে এগুলো করে এবং সকালে বেলা করে ঘুমায়। এভাবে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে। অনেক শিশু কিশোররা তারা সামাজিকরন ভুলে যাচ্ছে। তাদের কোন বন্ধু নাই, তারা একত্র হলে মোবাইলের গেম নিয়ে আলোচনা করে। তারা একত্র হয়ে টিকটক বানাচ্ছে, ফেসবুক ব্যবহারে সময় অপচয় করছে। ম্যাছেনযারে দীর্ঘসময় চ্যাটিং করছে। সংসারের অন্যান্য দিকে তাদের খেয়াল থাকে না। সংসারের অন্য কাজে তারা সময় দিচ্ছে না। এভাবে আমাদের বাচ্চারা সমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে এই সব শিশুকিশোরদের বেশী করে সামাজিক অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে হবে। মোবাইল ব্যবহার এক ঘন্টা নির্দিষ্ট করে দেওয়া যেতে পারে। বাচ্চাদের মোবাইল পরিবর্তে খেলার মাঠে পাঠিয়ে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষন তৈরী করা। এভাবে ধীরে ধীরে মোবাইল আসক্তি থেকে ওদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
মাহমুদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর এক ছাত্রীর অভিভাবক আমেনা বেগম জানান, তার মেয়ে শুয়ে শুয়ে সব সময় মোবাইল ফোন চালাতো। এতে মেয়ের চোখের মনি বাকা হয়ে যাচ্ছিল। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে অপারেশন করে তার চোখের অপারেশন করা হয়। অপারেশন করে চোখ ঠিক করা হলেও মেয়েকে মোবাইল দেখা পুরোপুরিবন্ধ করাতে পারেননি বলে জানান ওই মা।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক কাজী তাজউদ্দিন রিপন বলেন, যেসব ছেলে-মেয়ে স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে তাদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিলে উত্তেজিত হয়ে পড়ছে বাচ্চারা। রাত জেগে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইডে সময় ব্যয় করে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যর উপরে পড়ছে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব। ক্লাসে বা পড়াশুনায় ঠিক মতো মনোযোগ দিতে পারছে না। পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করছে। আবার অনেকেই অনলাইন বন্ধুদের প্ররোচনায় বিভিন্ন ধরনের মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়ে।
শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী নোমান বলেন, সারাদিন স্কুলেই থাকি। স্কুলে শিক্ষকরা মোবাইল নিয়ে যেতে দেন না। স্কুল থেকে ফিরে যেটুকু সময় পাই ফোনে গেম খেলে সময় কাটাই। গেম না খেললে দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়। মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহারে নিজের শারীরিক ক্ষতি বুঝতে পারা সত্বেও নিজের আসক্তি কমাতে পারেন না বলে স্বীকার করেন।
আদিটাঙ্গাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর জুয়েল বলেন, অনেক সময় বন্ধুরা মিলে গেম খেলি। বেশি সময় ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখ দিয়ে পানি ঝরে। চোখ দিয়ে পানি ঝরলেও মোবাইল না দেখলে মন খারাপ হয়।
বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র খায়ের এতোটাই মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন যে সারারাত মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকতেন। ইন্টারনেটে দূরের বন্ধুদের সাথে ফ্রি ফায়ার গেম খেলতেন। তাকে কোনভাবেই মোবাইল আসক্ত থেকে ফেরাতে পারছেন না বলে জানান অভিভাবকরা। একপর্যায়ে পরিবারের চাপে কিছুটা মোবাইল আসক্তি কমেছে।
সরকারী এম এম আলী কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম তপন বলেন, মাদকাসক্তির সাথে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আসক্তির মধ্যে পার্থক্য নেই’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ফেসবুক বা ইন্টারনেট ব্যবহার আসক্তির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আমরা এটাকে বলি ‘নেট এডিকশন ডিসঅর্ডার’। মানুষ যেভাবে ইন্টারনেটে ঝুঁকে পড়ছে তা এখনই নিয়ন্ত্রণ করাতে না পারলে এসব শিশু-কিশোররা ভবিষ্যতে জাতির জন্য বোঝা হয়ে উঠবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং চর্তুথ বর্ষের আল আমিন সজিব জানান, একজন কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এবং সিক্সজি প্রযুক্তিতে আগ্রহী ক্ষুদে গবেষক হিসেবে আমি স্মার্টফোনের ইতিবাচক দিকগুলোকে স্বীকার করতে বাধ্য। তবে আমাদের সঠিকভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি বয়সসীমা নির্ধারণ করা উচিত এবং এর অপব্যবহার রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্মার্টফোন ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিকগুলো সর্ম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে, যাতে আমরা প্রযুক্তির আশীর্বাদকে অভিশাপে পরিণত না করি।
মাহমুদনগর টেকনিক্যাল স্কুলের সভাপতি ও জনতা ব্যাংকের এজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুমে ক্লাস নেয়ার সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী জুমে কয়েক মিনিটের জন্য এসেই হারিয়ে যায়। জুম ক্লাসে উপস্থিতি দেখিয়ে তারা ফেসবুক, ইন্টারনেট ডুবে থাকে। এতে দেখা যায় যে, তারা পরীক্ষায় খারাপ করে। এমনটি তারা স্বাস্থ্যগত ভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি শিশু-কিশোরদের হাতে দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোন না দেয়ার জন্য অভিভাবকের প্রতি আহবান জানান।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ ফরাজী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম মঞ্জু বলেন, দীর্ঘক্ষন মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে ব্যবহারীর স্বাস্থ্যেও উপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। শিশু-কিশোরেরা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে তাদের চোখের জ্যোতি কমে যেতে পারে। এছাড়া কানে কম শোনা, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যারা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তারা শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। যেসব শিশু কিশোরেরা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তারা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয় ও অন্যদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে।
কবি ও শিক্ষক হোসাইন মঈন বলেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত মুঠোফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। যারা দিনে ১৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় ফোনের পেছনে ব্যয় করেন তাদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। তিনি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধতি দিয়ে আরও বলেন, সেলফোনের অধিক ব্যবহারে শারীরিক কর্মকান্ডে কমে যায়, যা শারীরিক ফিটনেসের জন্য হুমকি।
টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ বলেন, স্মার্টফোন শুধু শিশুদেরই নয় এটি আমাদের স্বাভাবিক কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। শিশু-কিশোরদের জন্য মুঠোফোন নয়। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য অন্তরায় এই ইন্টারনেট। সবকিছুরই ভালো এবং মন্দ দুইদিক থাকে। প্রযুক্তির খারাপ দিক আছে। সেটিকে ভালভাবে ব্যবহার করার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।
এম.কন্ঠ/ ০২ এপ্রিল /এম.টি