বিলুপ্তপ্রায় বসন্তের রুপকন্যা শিমুল
ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে ফুলে ফুলে ভরে গেছে বিভিন্ন গাছ। শিমুল ফুলের রক্তিম রঙে প্রকৃতি সেজেছে এক রঙিন রূপে। গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। শীতের শেষে পাতা ঝরে ফাল্গুনে শিমুল ফুল ফোটে। ফল মোচাকৃতি।
প্রকৃতিকে যেন সাজিয়েছে শিমুল ফুলের শোভায় এক নতুন রূপে। বাতাসে দোল খাচ্ছে শিমুল ফুলের রক্তিম আভা। গাছের ডালে ফুটে থাকা শিমুল ফুল মানুষের মনকে রাঙিয়ে তুলেছে। আর শিমুল ফুল ফোটা উৎসবে মেতেছে ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রকৃতিপ্রেমীরা।
ফাল্গুন মাসজুড়ে শিমুল ফুল লাল পাপড়ি মেলে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। দূর থেকে হঠাৎ দেখলে ঠিক মনে হবে, কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য মনে করিয়ে দেয় জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন। জানা যায়, শিমুল গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে।
চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফুল ফলে পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই শিমুল গাছের জন্মের পর প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠে।
শিমুল গাছ কেবল সৌন্দর্যই বাড়ায় না এই গাছে রয়েছে নানা উপকারিতা এবং অর্থনৈতিকভাবেও বেশ গুরুত্ব বহন করে। শিমুল গাছের ছাল ঘা সারাতে সহায়তা করে। রক্ত আমাশয়ে দূর করে। ছাল ফোড়ার উপর প্রলেপ দিয়ে উপকার হয়। শিমুল তুলা খুব ভালো। এটার তৈরী বালিশ বা অন্য কোনো জিনিস খুব নরম। টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে শিমুল ফুল। তবে আগের তুলনায় খুবই কম। শহর অঞ্চলে তো শিমুল গাছের অস্থিত্ব নাই বললেই চলে।
বসন্তের সঙ্গে-সঙ্গেই প্রকৃতি যেন নিজ রূপে সেজে উঠেছে। রাস্তার পাশে শিমুল ফুলের সৌন্দর্য দেখে প্রকৃতিপ্রেমীদের নজর কাড়ছে। দোয়েল পাখি আর মৌমাছিদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত দৃশ্য আর যেকোনো পথচারীকে দাঁড়িয়ে দেখতে বাধ্য করবেই। রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে শিমুল গাছে ফুল বাতাসে দোল খাওয়ার এমন দৃশ্য পথচারিরাসহ দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে।
ফালগুনের আগমনে পলাশ, শিমুল গাছে লেগেছে আগুনে খেলা। লাল ফুলে পুরো এলাকায় সেজেছে রক্তিম আভায়। গাছের তলায় ঝরে পড়া লাল শিমুল ফুল দেখলে মনে হয় যেন কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। ফুলে আলাদা কোনো গন্ধ নেই, তবুও পথচারীদের বিমোহিত করে শিমুল ফুল।
আর সূর্যের খরতাপে সেদিকে তাকালে চোখে ভেসে ওঠে অনন্য সৌন্দর্য্য। কালের বিবর্তনে ঋতুরাজ বসন্তে এখন আর যেখানে-সেখানে চোখে পড়ে না রক্তলাল শিমুল গাছ। এক দশক আগেও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় গাছে গাছে শোভা বর্ধন করতো শিমুল ফুল।
মূল্যবান এ গাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। পরিবেশবাদী সংগঠকরা বলেন, প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে ফুটিয়ে তুলেছে শিমুল ফুল। তথ্যসূত্র বলছে, শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ বোমবাক্স সাইবালিন’ । এর ইংরেজি নাম সিল্ক কটন। এটি মালভেসি পরিবারের একটি গণের নাম। এরা পশ্চিম আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ার উপউষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলেন স্থানীয় প্রজাতি। গ্রাম বাংলার এই শিমুল গাছ আগে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এনে দিত। মানুষরা এই শিমুলের তুলা বিক্রি করতো।
অনেকে নিজের গাছের তুলা দিয়ে বানাতো লেপ, তোশক ও বালিশ। শিমুলের তুলা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছ। নির্বিচারে শিমুলগাছ নিধন ও চারা রোপণ না করার কারণে এ অঞ্চল থেকে শিমুল গাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। শিমুল গাছ রক্ষায় সরকারি নজরদারি বাড়ানো দরকার এবং সংরক্ষণে কৃষি বিভাগসহ পরিবেশবাদী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রকৃতিপ্রেমী চৌধুরী ফজলে রাব্বী শ্যামল বলেন, শিমুল ফুল না ফুটলে যেন প্রকৃতিতে বসন্তই আসে না। ঋতুর বৈচিত্রে শিমুল গাছের সুন্দর ফুল দেখেই বসন্তের আগমন উপলদ্ধি করি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আশেক পারভেজ বলেন,শিমুল গাছের শিমুল তুলা একসময় আবহমান বাংলায় প্রচুর ব্যবহার হতো। কিন্তু শিমুল তুলার বিভিন্ন ধরনের বিকল্প আসাতে শিমুল তুলার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। যে কারনে গাছ লাগাতে গেলে কেউ শিমুল গাছ লাগায় না। চৈত্র মাসের শেষের দিকে শিমুল ফুল থেকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই শিমুল গাছের জন্ম হয়। আর এভাবেই প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠে।
এম.কন্ঠ/ ০৩ মার্চ /এম.টি