টাঙ্গাইলে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাদের অভিযোগে স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর মামলা
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে স্বামীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাদের অভিযোগে স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কালিহাতীর ভবানীপুর গ্রামের মো. জহিরুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে মো. শওকত তালুকদার বাদি তার স্ত্রী ফারহানা ফারিহা ওরফে কাজলের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কালিহাতী থানা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ফারহানা ফারিহা ওরফে কাজল একই উপজেলার কাচিনা লখাই গ্রামের মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে খসরুর মেয়ে।
মামলায় একই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের সোহরাব মাস্টারের ছেলে মো. মাসুম আকন্দ, ফারহানার ভাই আশিকুর রহমান আশিক তার বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে খসরু, মা আনোয়ারা বেগম, বড় বোন কানিজা ফাতেমা ও কামরুন্নাহার লতাকে আসামী করা হয়েছে।
মামলা থেকে জানা যায়, শওকত তালুকদার একজন স্কুল শিক্ষক। ফারহানা তার স্ত্রী। মাসুম আকন্দ ফারহানার পরকীয়া প্রেমিক। ২০১৭ সালের ১৫ মে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ফারহানাকে ৯ম শ্রেণী থেকে এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করান। ২০২৪ সালে এইচএসসি (বিএম) পাশ করে আইইএলটিস করার কথা বলে ঢাকা যান। এক পর্যায়ে ফারহানা তার স্বামীকে জানান তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়েছেন। কয়েকদিন পরেই ফারহানা আবার বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার স্কলারশীপ পেয়েছেন।
২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল মাসুম, আশিকুর ও খসরুকে নিয়ে কালিহাতীর ভবানীপুর গ্রামে শুকতের বাড়িতে যান। জাল আইইএলটিস টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম দেখিয়ে এবং অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য শওকতের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা দাবি করেন। প্রথমে তিনি টাকা দিতে না চাইলেও তার শ^শুড় আবুল কালাম আজাদও টাকা দিতে সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে তিন মাসের মধ্যে শওকতকেও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ফারহানা ও তার বাবা।
মামলা থেকে আরও জানা যায়, ৯ লাখ টাকা ফারহানা না দিলেও তার বাবার আবুল কালাম আজাদ দিয়ে দিবেন বলে শওকতকে আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ফারহানাকে ৯ লাখ টাকা দেন শওকত। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা বলে হোয়াটস্ অ্যাপে কথা বলতো ফারহানা। এছাড়াও এসএমএসের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিতো। ফারহানা অন্য আসামীদের কু-প্ররোচনায় তাকেসহ আরো কিছু লোককে অস্ট্রেলিয়া নেয়ার কথা বলে বিকাশ, নগদ ও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ধাপে ধাপে তার কাছ থেকে আরো ২১ লাখ টাকা নেয়।
১৩ মাস পর শওকত জানতে পারে তার স্ত্রী ফারহানা অস্ট্রেলিয়া না গিয়ে টাঙ্গাইল শহরের রেজিস্ট্রিপাড়ায় বাসা ভাড়া করে বসবাস করছেন। তখন শওকত অনলাইনে সার্চ করে দেখেন আইলস টেস্ট রিপোর্ট ফর্ম দিয়েছিল তা জ্বাল এবং সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও হয় নাই। যেসব মোবাইল নম্বর থেকে ফারহানা তার সাথে কথা-বার্তা বলতো সেই নম্বরগুলোর মধ্য থেকে একটি নম্বর তার পরকীয়া প্রেমিক মাসুম আকন্দের।
চলতি বছরের ১২ জুলাই মাঝরাতে ফারহানা শওকতের বাসায় যান। পরে জিডির ভিত্তিতে ফারহানাকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেলে ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেন। নির্ধারিত সময়ে টাকা ফেরত না দিয়ে নানান তালবাহান শুরু করে ফারহানা।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফারহানার গ্রামের বাড়ি কালিহাতীর কাছিনা লখাই গ্রামে গেলে ৩০ লাখ টাকা নেওয়া ও ফেরত দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। টাকা চাইলে নানা ভাবে শওকতকে হুমকি দেয় ফারহানা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ফারহানা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ফোন করে শওকতকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। বর্তমানে শওকত নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
মো. শওকত তালুকদার বলেন, আমার স্ত্রী আমাকে জাল কাগজ পত্র দেখিয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার মাধ্যমে আমাকে নিঃশ্ব করে দিয়েছে। আমি আদালতের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।
ফারহানা ফারিহা ওরফে কাজলের সাথে মুঠোফোনের একাধিক নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদি পক্ষের আইনজীবী আদালতের অ্যাসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) এম এ মালেক আদনান জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার রেকর্ডের পর তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে ন্যায় বিচার পাবেন বলে মনে করছেন তিনি।
এম.কন্ঠ/ ০৬ অক্টোবর /এম. টি