পলিনেট হাউজে উচ্চ মূল্যে ফসল আবাদ
মোজাম্মেল হক॥
“কৃষিই সমৃদ্ধি” শ্লোগানকে সামনে নিয়ে টাঙ্গাইল জেলার প্রতিটি উপজেলায় শুরু হয়েছে পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যে ফসল আবাদ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে জেলায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পলিনেট হাউজ প্রদর্শনী বাস্তবায়নে বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকরা পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যে ফসল আবাদ করছেন। ফসলের আবাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে নিয়ন্ত্রন করে উচ্চ মূল্যে ফসল আবাদ করার পদ্ধতিই হচ্ছে পলিনেট হাউজ। পলিনেট হাউজে উচ্চ মূল্যে ফসল আবাদ সবার কাছেই নতুন ধরনের আবাদ।
পলিটেনের ঘরের ভিতর এই চাষ পদ্ধতি। এই চাষ পদ্ধতিতে রোদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে রাখা যায়। পলিনেট দিয়ে ঘেরাও থাকার কারনের বিভিন্ন ক্ষতি কারণ পোকামাকড় আবাদী ফসলের কোন ক্ষতি করতে পারে না। মাটিতে পরিমান মত সার, কীটনাশক এবং পানি নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসম্মত ফসল ঘরে তোলা যাবে।
ঋতুভেদ ছাড়াও অন্য যে কোন সময়ে কোন ফসল আবাদ করা হয়। পলিনেট প্রকল্পে ফসলি আবাদ জেলায় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রথম শুরু হয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের দৃঢ বিশ্বাস এভাবে ফসল আবাদ করলে অবশ্যই লাভ হবে। প্রথমে তারা আবাদি ফসল হিসেবে ক্যাসপি কাফ, টমোটো ও মরিচ চাষ করছেন।
এই সব চাষে সফলতা লাভ করলে অন্যান্য ফসলও চাষ করবেন বলে জানা গেছে। সদর উপজেলার মীরের বেতকায় কৃষক কাজী বাহালুল হক নিপু তার ১০ শতাংশ জমিতে ২০২২ সালে জুলাই মাস হতে পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যে ফসল আবাদ সরকারী খরচে চালু করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর । ১০ শতাংশ জমিতে পলিনেট ঘর বানাতে ১৮ লাখ খরচ হয়েছে।
মীরের বেতকা পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যে ফসল আবাদ দেখাশোনা করছেন সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামান।
তিনি বলেন’ পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যে ফসল আবাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সারা বছর প্রয়োজনীয় ফসলের আবাদ। বাজারে যে ফসলের মূল্য বেশী সেই ফসলের আবাদই পলিনেট চাষাবাদের মূল্য লক্ষ্য। পলিনেট উচ্চমূল্যে ফসল আবাদ বাজারের চাহিদাকৃত পন্যের যোগান দিতে পারবে।”
পলিনেট হাউজ প্রকল্পের জমির মালিক কাজী বাহালুল হক নিপু বলেন’ “ আমার বাবা কৃষক খিরু মিয়া সবসময়ই ধান,পাট, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করতেন। তারপর সরকারের পক্ষ থেকে পলিনেট হাউজ দিলো, এই পলিনেট হাউজে আমি শস্য বহুমুখী করনের লক্ষ্যে আব্বার মৃত্যুর পরে আমি বিভিন্ন রকম শাকসবজীর আবাদ শুরু করেছিলাম। এখন সাধারণ ভাবে ফসলের আবাদ করলে লাভ উঠানো যায় না। তাই সরকারী সহায়তায় পলিনেট হাউজে উচ্চমুল্যে ফসলের আবাদ শুরু করেছি, আমি আশাবাদী উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করতে পারি”।
পলিনেট হাউজে উচ্চমূল্যে ফসল আবাদ সর্ম্পকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুমানা ইসলাম বলেন“ পলিনেট হাউজ নিরাপদ কৃষি পন্য উৎপাদনের একটি প্রক্রিয়া। এটি একটি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা পলিনেটে প্রকৃতির বিরুপতাকে কন্ট্রোল করে আমরা চাষ সবজী করতে পারি। গ্রীষ্ম কালে সবজী শীতকালে, শীতকালের সবজী গ্রীষ্ম কালে চাষ করতে পারি। এটা কৃষক মনের মতো করে পলিনেট হাউজে করতে পারে। পলিনেট হাউজে সব সময় অনুকুল পরিবেশ বিরাজ করা যায়। পলিনেট হাউজে তাপমাত্রা বেশী হলে সেটা পানি সেচের মাধ্যমে সঠিক নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।
জেলার কৃষি কর্মকতা মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন বলেন’ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আওতায় আমাদের টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলাতে পলিনেট হাউজ স্থাপন করেছি। এইগুলি হলো আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি চাষ । তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে আমরা অসময়ের শস্য চাষ করতে পারি। এছাড়া চাষে ফলনও ভালো হয়। এই কারণে কৃষকরা খুবই আগ্রহী পলিনেট হাউজ চাষে। পলিনেট হাউজ চাষের কারনে বাজারের উচ্চ মূল্যের সবজি সুলভ মূল্যে পেতে পারি। আমরা আশাকরি মাঠ পর্যায়ে এই চাষ বৃদ্ধি পেলে সে ক্ষেত্রে ভোক্তা ও কৃষক দু’পক্ষই লাভবান হবে’।
পলিনেট হাউজ উচ্চ মূল্যে ফসল আবাদ জেলার ১২টি উপজেলার সৌখিন কৃষকদের মাঝে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারী খরচে তাদের পলিনেট হাউজ তৈরী করে সবজী আবাদের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। পলিনেট হাউজের আবাদ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন সহকারী কৃষি কর্মকতাদের। সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে সৌখিন কৃষক পলিনেট হাউজে উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদ করবেন।
এম.কন্ঠ/২১ ফেব্রুয়ারি/ এম.টি
সংবাদটি শেয়ার করুন