গ্যাস সরবরাহ বন্ধের আগেই দুর্ভোগ
ঘরে গ্যাস সংযোগসহ চুলা থাকলেও বারান্দায় মাটির চুলায় রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বগুড়ার নামাজগড় এলাকার গৃহিণী আয়েশা বানু। চারদিকে রান্নার জিনিসপত্র ছড়ানো-ছিটানো। চোখ ডলতে ডলতে চুলায় ফুঁ দিচ্ছিলেন তিনি। তিন মিনিটের চেষ্টায় আগুন জ্বলে। এ চুলাতেই তাঁকে দু’দিন রান্না করতে হবে। আক্ষেপ করে আয়েশা বলছিলেন, বড় ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার প্রথম পরীক্ষা হয়েছে। দু’দিন পর রোববার তার দ্বিতীয় পরীক্ষা। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গ্যাস বন্ধের ভোগান্তিতে ফেলার প্রয়োজন ছিল না। ছেলের প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করবেন, নাকি রান্না করবেন– সে প্রশ্ন তাঁর।
শুধু আয়েশা নন, জেলার বাসাবাড়িতে আবাসিক সংযোগ থাকা ১৯ হাজার ৩০০ গ্রাহককে পোহাতে হবে এ ধরনের দুর্ভোগ। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে পাইপলাইন মেরামতের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ কারণে বৃহস্পতিবার মাটির চুলাটি ঠিকঠাক করে নিচ্ছিলেন আয়েশা। বগুড়াসহ চার জেলায় গ্যাস সরবারহ বন্ধ রাখবে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি (পিজিসিএল)। ফলে জেলার ১৯টি ফিলিং স্টেশন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৮৬টি বাণিজ্যিক সংযোগ ও ৪৩টি কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হবে।
সংযোগ বন্ধের খবরে ফিলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সিলিন্ডার ভর্তি করেছেন গ্যাসচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও বাসচালকরা। জেলায় প্রায় ৯০০টি বাস, তিন হাজার অটোরিকশা ও কয়েক হাজার মাইক্রোবাস জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে। ৬০ ঘণ্টা সংযোগ বন্ধ থাকলে তাদের পরিবহনগুলো পড়ে থাকবে। এতে ভোগান্তিতে পড়বেন যাত্রীরা। এমনকি গুনতে হতে পারে বাড়তি ভাড়াও।
শহরের নিরালা ফিলিং স্টেশনের কর্মী কামরুজ্জামন বলছিলেন, সকাল থেকে গ্যাসচালিত সব পরিবহন সিলিন্ডার ভরে নিতে ভিড় করছে। দীর্ঘ লাইন ধরে তাদের জ্বালানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বাসচালক রমজান কাদিরের ভাষ্য, একবার জ্বালানি ভরে একদিন যাতায়াত করা যায়। এ জন্য শুক্রবার গাড়ি চললেও বাকি দিনগুলো বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।
এভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে বাস বন্ধের পাশাপাশি যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়বেন জানিয়ে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, আন্তঃজেলা রুটে ৮০ শতাংশ ও ভিন্ন জেলায় চলাচলকারী ২০ শতাংশ বাস গ্যাসচালিত।
এদিকে জেলার অন্তত পাঁচটি খাদ্য উৎপাদনকারী বেকারিসহ ৮৬টি হোটেলে বাণ্যিজিক গ্যাস সংযোগ আছে বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজর শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো একদিনেই কোটি টাকার খাবার কেনাবেচা করে। ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান শনিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় শিমু বেকারির স্বত্বাধিকারী এমদাদুল হক বলেন, প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বেকারি খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করেন তারা। গ্যাস বন্ধ থাকায় ওভেন ও চুলা বন্ধ থাকবে। এতে করে সবারই লোকসান হবে।
জেলার ৪৩টি শিল্পকারখানায় পণ্য উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বগুড়া বিসিকের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। বিসিকের মেসার্স মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের স্বত্বাধিকারী আজিজার রহমান মিলটন বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদনের জন্য এ জেলা অন্যতম। প্রতিদিনই কোটি কোটি টাকার সামগ্রী উৎপাদন হয়। গ্যাস বন্ধ থাকলে প্রভাব পড়বেই।
পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি (পিজিসিএল) বগুড়ার ডেপুটি ম্যানেজার মাইনুর রহমান বলেন, সিরাজগঞ্জে পাইপলাইনে কাজের জন্য গ্যাস সরবারহ বন্ধ থাকবে। চেষ্টা চলছে ফিলিং স্টেশন, বাণ্যিজিক ও কলকারখানা পুরোপুরি বন্ধ রাখার। এতে পাইপে থাকা গ্যাসে বাসাবাড়ির ভোক্তারা ৬০ ঘণ্টা রান্না করতে পারবেন। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালালে পাইপে থাকা গ্যাস বেশি সময় ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।