টাঙ্গাইলে বায়তুল আমান জামে মসজিদ হলো এলাকার প্রথম ছাপড়া মসজিদ
টাঙ্গাইল সদরের ১২নং ওয়ার্ড আদি টাঙ্গাইলের বায়তুল আমান জামে মসজিদই হলো টাঙ্গাইল শহরের প্রথম গড়ে উঠা ছাপড়া মসজিদ। ১৯৬৯ সালে শান্তিপ্রিয় নিরিবিলি এলাকায় রাইস মিল ব্যবসায়ী মরহুম খন্দকার হায়দার আলীর প্রচেষ্টায় তার নিজস্ব জমিতে ৩৫টি পরিবারের সমাজ নিয়ে আদি টাঙ্গাইলে “বায়তুল আমান জামে মসজিদ” নাম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা গেছে মরহুম হায়দার আলীর সাথে সমাজসেবক হিসেবে এ সময় তাকে সহযোগিতা করেছেন মরহুম আব্দুল কদ্দুস মধু, মরহুম আব্দুল আহাদ,মরহুম কায়কোবাদ, মরহুম আব্দুল বশির, মরহুম বরকত উল্লাহ ও মরহুম মিন্টু প্রমুখ।
১০ শতাংশ জমিতে নির্মিত মসজিদ শুরুর দিকে মসজিদ ছিল পাটখড়ি ও তালাইয়ের বেড়া এবং উপরে টিনের ফালি। শক্ত বাঁশের সাথে উপরে টিন শক্ত রশি দিয়ে বাঁধা। নামাজ পড়ার মেঝে ছিলে মাটির উপরে ছালা দেওয়া। এ মসজিদেও প্রথম ইমাম ছিলেন ময়মনসিংহের গফর গাঁ থেকে আগত মৌলভী মোসলেহ উদ্দিন। তিনি পরবর্তীতে শহরের দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন।
আদি টাঙ্গাইল বায়তুল আমান জামে মসজিদ নামটি হলেও অনেককাল মসজিদটি টিনের ছাপড়া আর তালাইয়ের বেড়া থাকার কারণে “ছাপড়া মসজিদ” নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এক সময় আদি টাঙ্গাইলের এলাকাটি ছাপড়া মসজিদ এলাকা নামে পরিচিত পায়। দূর থেকে অচেনা মানুষ সহজেই “ছাপড়া মসজিদ” নামেই এই এলাকাকে চিহিৃত করে ফেলে। যদিও এই এলাকার নিকটে ২০০ বছরের অধিক বয়সী বেপাড়ীপাড়া এবং ঐতিহ্যবাহী বাজিতপুরে ১টি করে মসজিদ ছিলো। তারপরও আদি টাঙ্গাইল এলাকাবাসী দেলদুয়ার রোডের পাশে এই মসজিদ তাদের প্রিয় মসজিদ হয়ে উঠলো।
এলাকাটি ছিলো অনেকটা নিরিবিলি। যে কারণে দূর অঞ্চলের মানুষও এই এলাকায় আসলে এই মসজিদ নামাজ পড়তেন। আদি টাঙ্গাইল এলাকায় নাগরপুর, মির্জাপুর, দেলদুয়ার, গোপালপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সরকারী চাকরীজীবি কিংবা ব্যবসায়ীরা এই নিরিবিলি এলাকার আদি টাঙ্গাইলে বসবাস করার জন্য বাড়ীঘর করতে লাগলো। এক সময় ৩৫ পরিবার থেকে ১০০ অধিক পরিবার হয়ে গেলো। জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে মসজিদে নামাজীও বেড়ে গেলো। এই ভাবেই চললো নব্বই সাল পর্যন্ত।
১৯৮৮ সালে আদি টাঙ্গাইল সচেতন সমাজসেবকরা ছাপড়া মসজিদটি প্রথমে দেয়াল পাকা এবং পরবর্তীতে ঢালাইয়ের ছাদ নির্মান করে। ধীরে ধীরে মসজিদের নামাজী বাড়লে, তখন মসজিদের জায়গাও বাড়াতে হয়। ধীরে মসজিদের সামনে বারান্দাও নামাজের জন্য দখলে চলে যায়। মজিদের ভিতর ও বারান্দায় ৭ কাতারও জায়গা সংকুলান হয় না। বিশেষ করে জুম্মার নামাযে বেশী কষ্ট হয়। মৃত মানুষের জানাযা পড়ার নির্দিষ্ট জায়গা নাই। বারান্দার পাশে অল্প লোক নিয়ে জানাযার নামায পড়তে পারে, বেশী লোক হলে জায়গা হয় না। এছাড়া ঈদের নামাযও আছে। মসজিদের তিন পাশে রয়েছে ব্যক্তি মালিকানার দেয়াল। শুধুমাত্র উত্তর পাশে খোলা। এই পাশের রাস্তা দিয়েই মসজিদে প্রবেশ করতে হয়।
বর্তমানে ২৩৫ পরিবার নিয়ে এই সমাজ। সমাজের বাইরেও প্রচুর লোক এই মসজিদে নামায পড়ে। কোরবানী ঈদের সময় গরু কোরবানীর জায়গা এবং সমাজের গোস্ত বিতরণের জায়গা লাগে। কিন্তু আদি বায়তুল আমান জামে মসজিদের জায়গা কম। জানা গেছে বর্তমান সময়ে অল্প জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি ৫তলা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
এলাকার সমাজ ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাকিব হোসেন ইফুন ও শহিদুল ইসলাম স্বপনের সাথে কথা বলে জানা গেছে । মসজিদটি ৫ তলায় রুপান্তর করলে নিচের খোলা জায়গা ঈদের নামায ও জানাযার নামায ছাড়াও মসজিদের অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। দো’তলা থেকে ৪র্থ তলায় নামায এবং ৫ম তলা মসজিদের পাঠাগার কিংবা নামাযের মুসুল্লী বেড়ে গেলে সেটাও নামাযের জন্য ব্যবহার করা যাবে।” এছাড়া মসজিদের দক্ষিণ পাশ দিয়েই এই মসজিদে সকল নামাযীরা আসতো। সেই রাস্তাটি এখন বন্ধ। সেই রাস্তাটি পুনরায় চালু কিভাবে করা যায় সে ভাবনাও তাদের মাঝে আছে। এলাকার মানুষের চাওয়া মসজিদটি বড় হলে অনেক লোক নামায পড়তে পারবে এবং সকল মানুষের সহযোগিতা কামনা করছেন।
শুরুর দিকে সঠিক প্লান মাফিক না হওয়ায় মসজিদের দো’তলায় ছাদ নিমার্ণ সম্বব হয়নি। দিনে দিনে নামাযী বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। তাই এখনই সময় মসজিদটি নতুন করে বড় পরিসরের চিন্তা ভাবনা করে মেরামতের কাজে হাত দেওয়া। মসজিদের এলাকাবাসী ও নামাযী সবার কথা আদি টাঙ্গাইল বায়তুল আমান জামে (ছাপড়া মসজিদ) মসজিদটির সংস্কার জরুরী।
এম.কন্ঠ/ ২৪ অগাস্ট /এম.টি