ঢাকা ০৮:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ
বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না…আহমেদ আযম খান আ.লীগ রাতে কাল নাগিনী হয়ে ছোঁবল মারতো আবার দিনের আলোতে ওঝা হয়ে ঝাড়তো…আল্লামা মামুনুল হক টাঙ্গাইলে নবাগত জেলা প্রশাসক শরীফা হকের যোগদান টাঙ্গাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ কালিহাতীতে রেল লাইনের পাশে অজ্ঞাত বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার ঘাটাইলে কিশোরের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারে ‘একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়’ বই নিয়ে পাঠচক্র আমরা এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি, অন্য ফ্যাসিস্টকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য নয়..সারজিস আলম স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালালেও তার পেতাত্মারা আনাচে কানাচে ঘুরছে..তারেক রহমান টাঙ্গাইলে ইসলামী আন্দোলনের গণ-সমাবেশ

টাঙ্গাইলে কারখানার বর্জ্য, ময়লা আবর্জনায় দূষিত লৌহজং নদী

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১২:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টাঙ্গাইল শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদী ময়লা, আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। এছাড়াও কল-কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ফলে পঁচা পানি প্রতিনিয়ত দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর দুই পাড়ের পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে পুরো জীববৈচিত্রে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় ৭ বছর আগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে গত প্রায় ৫ বছর ধরে কার্যক্রম না থাকায় অবৈধ দখলদাররা ফের জেঁকে বসেছে। ফলে নদীটি মৃত খালে পরিণত হয়েছে।

নদীর প্রাণ ফেরাতে ১ মার্চ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নদীর ৪ কিলোমিটার এলাকা পরিস্কার করা হবে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিডিক্লিনের প্রায় দুই হাজার কর্মী পরিস্কার কাজে অংশ নিবে। বুধবার সকালে নদীর পারের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম।

এ সময় টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওলিউজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান-বিন-মোহাম্মদ আলী, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, নদী রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুল হক রতন সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, লৌহজং নদীটি সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার। এক সময় শহরের নিরালাড়া মোড় এলাকায় নৌবন্দর ছিলো। দেশ-বিদেশে থেকে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা আসতো এ নৌবন্দরে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল এখানে। বর্তমানে সব কিছুই যেনো রূপকথার গল্প।

দীর্ঘদিন ধরে নদীটি ড্রেজিং না করায় নদীটি তার নাব্যতা হারিয়েছে। এই সুযোগে দুই পাড়ের বাসিন্দারা কৌশলে প্রথমে ময়লা আবর্জনা ফেলে দখল করছে। পরবর্তীতে স্থায়ী ভবন, দেয়াল ও স্থাপনা নির্মাণ করে নদীটি দখল করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিল কারখানা ও শহরের সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পানি।

নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য ২০১৬ সালে আন্দোলনে নামে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। ওই সময়ে শহরের পুলিশ লাইনস হাজরাঘাট এলাকা থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূষণ ও দখল মুক্ত করা হয়। গত চার বছর যাবত কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীর পানি আর ব্যবহার উপযোগী নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে।

আকুরটাকুর পাড়ার বাসিন্দা হুমায়ন মিয়া বলেন, তিন চার দশক আগেও এই নদীতে গোসল করা যেতো। নদীর পানি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগি। নদীতে মাছ তো দূরের কথা, পানিতে বসবাসকারী কোন পোকাও থাকে না। এর কারন হচ্ছে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ফেলে নদীটি বিভিন্নভাবে দূষণ করা হচ্ছে। নদী থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, কয়েক বছর যাবত লৌহজং নদীর উদ্ধার কার্যক্রম থমকে আছে। ৭৫ কিলোমিটার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা উচিৎ। সেখানে চার কিলোমিটার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্যে নদী দূষণ হচ্ছে। যৌথভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমানে আইন লঙ্ঘন করে নদী দখল করা হচ্ছে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ড্রেনের লাইন নদীতে দেওয়া রয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, নদী পরিস্কার করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সভা করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা শেষে লৌহজং নদী পুনঃখননের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ কাজ বাস্তবায়ন করতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

 

এম.কন্ঠ/২৮ ফেব্রুয়ারি/ এম.টি

নিউজটি শেয়ার করুন

টাঙ্গাইলে কারখানার বর্জ্য, ময়লা আবর্জনায় দূষিত লৌহজং নদী

প্রকাশ: ১২:৫২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টাঙ্গাইল শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদী ময়লা, আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। এছাড়াও কল-কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। ফলে পঁচা পানি প্রতিনিয়ত দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর দুই পাড়ের পরিবেশ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে পুরো জীববৈচিত্রে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রায় ৭ বছর আগে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে গত প্রায় ৫ বছর ধরে কার্যক্রম না থাকায় অবৈধ দখলদাররা ফের জেঁকে বসেছে। ফলে নদীটি মৃত খালে পরিণত হয়েছে।

নদীর প্রাণ ফেরাতে ১ মার্চ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নদীর ৪ কিলোমিটার এলাকা পরিস্কার করা হবে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিডিক্লিনের প্রায় দুই হাজার কর্মী পরিস্কার কাজে অংশ নিবে। বুধবার সকালে নদীর পারের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম।

এ সময় টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ওলিউজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান-বিন-মোহাম্মদ আলী, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, নদী রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুল হক রতন সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, লৌহজং নদীটি সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার। এক সময় শহরের নিরালাড়া মোড় এলাকায় নৌবন্দর ছিলো। দেশ-বিদেশে থেকে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা আসতো এ নৌবন্দরে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল এখানে। বর্তমানে সব কিছুই যেনো রূপকথার গল্প।

দীর্ঘদিন ধরে নদীটি ড্রেজিং না করায় নদীটি তার নাব্যতা হারিয়েছে। এই সুযোগে দুই পাড়ের বাসিন্দারা কৌশলে প্রথমে ময়লা আবর্জনা ফেলে দখল করছে। পরবর্তীতে স্থায়ী ভবন, দেয়াল ও স্থাপনা নির্মাণ করে নদীটি দখল করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিল কারখানা ও শহরের সব ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে দূষিত করা হচ্ছে পানি।

নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত করার জন্য ২০১৬ সালে আন্দোলনে নামে স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর নদীটি দূষণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন। ওই সময়ে শহরের পুলিশ লাইনস হাজরাঘাট এলাকা থেকে বেড়াডোমা পর্যন্ত চার কিলোমিটার দূষণ ও দখল মুক্ত করা হয়। গত চার বছর যাবত কোনো কার্যক্রম না থাকায় নদীর পানি আর ব্যবহার উপযোগী নেই। নদীর স্বাভাবিক গতি হারিয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে।

আকুরটাকুর পাড়ার বাসিন্দা হুমায়ন মিয়া বলেন, তিন চার দশক আগেও এই নদীতে গোসল করা যেতো। নদীর পানি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগি। নদীতে মাছ তো দূরের কথা, পানিতে বসবাসকারী কোন পোকাও থাকে না। এর কারন হচ্ছে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য ফেলে নদীটি বিভিন্নভাবে দূষণ করা হচ্ছে। নদী থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, কয়েক বছর যাবত লৌহজং নদীর উদ্ধার কার্যক্রম থমকে আছে। ৭৫ কিলোমিটার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা উচিৎ। সেখানে চার কিলোমিটার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্যে নদী দূষণ হচ্ছে। যৌথভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমানে আইন লঙ্ঘন করে নদী দখল করা হচ্ছে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন ড্রেনের লাইন নদীতে দেওয়া রয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম বলেন, নদী পরিস্কার করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সভা করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা শেষে লৌহজং নদী পুনঃখননের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ কাজ বাস্তবায়ন করতে সকলের সহযোগিতা চান তিনি।

 

এম.কন্ঠ/২৮ ফেব্রুয়ারি/ এম.টি