টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা
টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে রোববার পর্যন্ত। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরননেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত মেলায় জামাই ও বউ ছাড়াও সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছে। তাদের উপস্থিতিতে উৎসবে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ রসুলপুরে তিনদিন ব্যাপী জামাই মেলা বসে। মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেলা উপলক্ষে জামাইকে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরাও বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। ঐতিহ্য অনুযায়ী মেলার সময় শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকার সঙ্গে জামাইরা তাদের টাকা দিয়ে মেলা থেকে শ^শুরবাড়ির সবার সবার জন্য বাজার করেন। মেলাটি জামাই ও বউসহ সবাই খুব আনন্দে উপভোগ করেন।
এদিকে, মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন দোকানীরা। মেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকান, মিষ্টির দোকানসহ ছোট-বড় দোকান বসেছে। বৈশাখের ভ্যাপসা গরমের মাঝেও মেলায় হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। কেউ ঘুরছেন আবার কেউ বিভিন্ন পন্য কিনছেন। মেলায় আসতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
ওই এলাকার আব্দুল খালেক নামের এক জামাই বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে আমি প্রায় ২৫ বছর যাবত শ^শুড়বাড়ি আসি। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে আসা মিস করলেও মেলায় আসা আমার মিস হয় না। আমার সাথে আমার বাবা মা ও ভাইও এসেছেন। মেলায় আসলে গ্রামীণ ঐতিহ্যে হারিয়ে যাই। প্রচন্ড গরমে কষ্ট হলেও মেলায় আসতে পেরে ভাল লাগছে।
শিল্পী রাণী নামে এক গৃহবধূ বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে ঘাটাইলে। মেলাকে কেন্দ্র করে বাবার বাড়িতে এসেছি তিন দিন আগে। আমাদের গ্রামে আমার মতো অনেক নায়োরি আসায় উৎসবে আমেজ বইছে। জামাইকে নিয়ে মেলা এসে ভ্যাপসা গরমেও ভাল লাগছে।
রসুলপুরের বাসিন্দা লেখক রাশেদ রহমান বলেন, ‘প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজা-পার্বণের মতোই এই মেলা একটি উৎসব। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত।’
ব্যবসায়ী অমিত ঘোষ বলেন, সন্ধ্যার পর ঠান্ডা থাকায় ওই সময় মেলা বেশি জমে। তাছাড়া সারাদিন চমচম, রসগোল্লা ও জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। সময় যত যাবে বিক্রি ততই বাড়বে।
অপর ব্যবসায়ী লাল চান মিয়া বলেন, মেলা জমে উঠেছে। এটি জামাই মেলা হলেও কেউ বাবা মা, কেউ নাতি পুতি নিয়েও মেলায় এসেছে। আমার দোকানের হরেক রকমের আকরি, খই ভালই বিক্রি হচ্ছে।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান বলেন, ‘মেলা সফল করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। তারা খাবারের দোকান, মিষ্টিজাতীয় পণ্যের দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনীর দোকানও দিয়েছেন মেলায়। এ ছাড়াও মেলায় একাধিক ফার্নিচারের দোকানও বসেছে। রসুলপুরের এই মেলাটি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম। আগামী রবিবার সন্ধ্যায় এ মেলা শেষ হবে। তিন দিনে মেলায় দুই কোটি টাকার উপরে বাণিজ্য হবে।’
এম.কন্ঠ/ ২৬ এপ্রিল /এম.টি