ঢাকা ০৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ
ঘাটাইলে লাল মাটি কাটার অপরাধে দুইজনকে ২লাখ টাকা অর্থদন্ড টাঙ্গাইলে শ্রমিকদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে ফরহাদ ইকবাল টাঙ্গাইলে ফরহাদ ইকবালের পক্ষ থেকে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ টাঙ্গাইলে শ্বশুড়বাড়ীতে নাটোরের ট্রাক চালক আলমকে হত্যার অভিযোগ দেলদুয়ারে আটিয়া ইউনিয়ন আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবীন বরণ, মিলাদ ও ক্রীড়া অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইল শহরে চুরি ছিনতাই রোধে পুলিশি চেকপোস্ট টাঙ্গাইলে ফুটবল ফেস্টিভ্যাল টাঙ্গাইলে শীতার্তদের মাঝে বিএনপির প্রচার সম্পাদক টুকুর পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ কালিহাতীতে এলজিইডি’র প্রকল্পে নারী শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ টাঙ্গাইলে শীতার্তদের মাঝে যুবদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

কালিহাতীতে এসএসসিতে ফেল করেও চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন ভুয়া চিকিৎসক

কালিহাতী প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০৩:১০:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদুরে ও প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনে নিজের ফার্মেসীতে বসে দীর্ঘদিন যাবত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছেন ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

একটা সময় তিনি নিজেই ছিলেন দীর্ঘদিনের চর্মরোগের রুগী। অন্যদিকে তিনি ২বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২বারই হয়েছেন অকৃতকার্য। এরপর আর পরীক্ষাই দেননি তিনি। অথচ তিনিই এখন প্রেসক্রিপশন করছেন ডাক্তার পরিচয় দিয়ে।

প্রশ্ন উঠেছে কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো উপস্থিত না থাকায় ও রোগিদের প্রতি সময় না দেয়ায় এই ভুয়া চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রুগিরা। প্রতিদিন শতাধিক রুগির সাথে প্রতারনা করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদ না করতে বাঁধাও দেয়া হয়। ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর নিজের দোষ স্বীকার করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নেয়া হবে ব্যবস্থা। তবে দায় দেখছেননা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিহাতীর পৌর শহরের পশু হাসপাতালের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের রানা ফার্মেসীতে বসে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছেন ভবেশ চন্দ কর নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। আগে প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লিখলেও সম্প্রতি ডাক্তার লেখা বন্ধ করেছেন তিনি। তবে প্রেসক্রিপশনে তার নাম ও পদবি এমন ভাবে লিখেছেন দেখে মনে হয় হুবহু এমবিবিএস ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। প্রতিদিন এভাবে শতাধিক রুগি দেখেন। রুগিদের কাছ থেকে সরাসরি ভিজিট না নিলেও ওষুধের দামের সাথে ১০০টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নিয়ে থাকেন ভবেশ চন্দ্র কর ।

চিকিৎসা নিতে আসা আসমা খাতুন জানান, রানা ফার্মেসীতে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার পর চর্মরোগ কিছুটা কমেছিলো। কয়েকদিন পর আরো বেড়েছে। আজ আবার ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

ভবেশ চন্দ্র কর ডাক্তার না এটা জানেন কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে আসমা বলেন, ডাক্তার না হলে ফার্মেসীতে বসে রুগি দেখেন কি ভাবে। ভিজিটও নিচ্ছেন। উপজেলা পরিষদ এখানে, পাশে সরকারি হাসপাতাল এতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে রুগি দেখছে তাহলে প্রশাসন কি করে এমন প্রশ্ন তার।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক দোকানদারসহ স্থানীয়রা জানান, মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চাকরি করা অবস্থায় ফার্মেসী খুলে তখন থেকে মানুষের সাথে এভাবেই প্রতারণা করে আসছে ভবেশ চন্দ্র কর। প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক রুগি দেখেন। ভবেশের আরেকটি প্রতারণা হচ্ছে ওষুধের দামের সাথে যোগ করে ভিজিট নিয়ে থাকেন তার কর্মচারীর মাধ্যমে। কার কাছ থেকে কতটাকা ভিজিট নেয় তাও বলেনা। কিছুদিন আগে এক রুগির কাছ থেকে ওষুধের দামের থেকে প্রায় সাড়ে ৫শত টাকা বেশি নিয়েছে। ওই রুগি অন্য জায়গা থেকে ওষুধের দাম যাচাই করে এসে ভবেশের সাথে তর্কে জড়ায় । পরে সে ১০০টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেন। কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চর্মরোগের ডাক্তার না থাকায় রুগিরা ভবেশ চন্দ্র করের কাছে ভীড় জমায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের উপস্থিতি থাকলে মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসতোনা।

ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর জানান, একসময় সে নিজেই ছিলেন চর্মরোগের রুগি। মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় ডাক্তারদের সাথে তার সম্পর্ক তৈরী হয়। পরে ডাক্তারের সহকারীর চাকরি নেন। ডাক্তারের সাথে থাকার সুবাদে চিকিৎসা দিতে শিখেছেন তিনি। পরে ফার্মেসী খুলে কর্মচারী রেখেছেন। সময় পেলে এসে রুগি দেখতেন। এভাবেই চলছে কয়েকযুগ ধরে।

তিনি জানান, মাঝে ২বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে পাস করতে পারেননি। পরে আর পরীক্ষা দেননি। জলছত্র হাসপাতাল থেকে অবসরের পর ৬মাস একটি ক্লিনিকে ম্যানেজারের চাকরি করেছেন। এরপর থেকে ফার্মেসীতে বসেই রুগি দেখেন।

প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লেখার বিষয়টি অস্বীকার করে ভবেশ চন্দ্র কর জানান, প্রেসক্রিপশনগুলো ওষুধ কোম্পানীর লোকেরা দিয়ে থাকে তারা ভুল করে দিয়েছিলো। পরে তা ফেরত দিয়েছি। রুগিদের কাছ থেকে ১০০টাকা করে ভিডিট নেন জানিয়ে তার ভুল স্বীকার করে আর কখনো প্রেসক্রিপশন করবেননা বলে জানান ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. রাহাত হোসেন জানান, চিকিৎসক না হলে কারো প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রেসক্রিপশন না করার কথা বললেও এখনো প্রতিদিন আগের মতোই প্রেসক্রিপশন করে রুগি দেখছেন ভূয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

 

এম.কন্ঠ/ ০৮ ডিসেম্বর /এম.টি

নিউজটি শেয়ার করুন

কালিহাতীতে এসএসসিতে ফেল করেও চিকিৎসাপত্র দিচ্ছেন ভুয়া চিকিৎসক

প্রকাশ: ০৩:১০:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদুরে ও প্রাণী সম্পদ অফিসের সামনে নিজের ফার্মেসীতে বসে দীর্ঘদিন যাবত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছেন ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

একটা সময় তিনি নিজেই ছিলেন দীর্ঘদিনের চর্মরোগের রুগী। অন্যদিকে তিনি ২বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ২বারই হয়েছেন অকৃতকার্য। এরপর আর পরীক্ষাই দেননি তিনি। অথচ তিনিই এখন প্রেসক্রিপশন করছেন ডাক্তার পরিচয় দিয়ে।

প্রশ্ন উঠেছে কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সময়মতো উপস্থিত না থাকায় ও রোগিদের প্রতি সময় না দেয়ায় এই ভুয়া চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন রুগিরা। প্রতিদিন শতাধিক রুগির সাথে প্রতারনা করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদ না করতে বাঁধাও দেয়া হয়। ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর নিজের দোষ স্বীকার করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে নেয়া হবে ব্যবস্থা। তবে দায় দেখছেননা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিহাতীর পৌর শহরের পশু হাসপাতালের সামনে দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের রানা ফার্মেসীতে বসে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে প্রেসক্রিপশন করে আসছেন ভবেশ চন্দ কর নামের এক ভুয়া চিকিৎসক। আগে প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লিখলেও সম্প্রতি ডাক্তার লেখা বন্ধ করেছেন তিনি। তবে প্রেসক্রিপশনে তার নাম ও পদবি এমন ভাবে লিখেছেন দেখে মনে হয় হুবহু এমবিবিএস ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন। প্রতিদিন এভাবে শতাধিক রুগি দেখেন। রুগিদের কাছ থেকে সরাসরি ভিজিট না নিলেও ওষুধের দামের সাথে ১০০টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নিয়ে থাকেন ভবেশ চন্দ্র কর ।

চিকিৎসা নিতে আসা আসমা খাতুন জানান, রানা ফার্মেসীতে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ার পর চর্মরোগ কিছুটা কমেছিলো। কয়েকদিন পর আরো বেড়েছে। আজ আবার ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

ভবেশ চন্দ্র কর ডাক্তার না এটা জানেন কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে আসমা বলেন, ডাক্তার না হলে ফার্মেসীতে বসে রুগি দেখেন কি ভাবে। ভিজিটও নিচ্ছেন। উপজেলা পরিষদ এখানে, পাশে সরকারি হাসপাতাল এতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে রুগি দেখছে তাহলে প্রশাসন কি করে এমন প্রশ্ন তার।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক দোকানদারসহ স্থানীয়রা জানান, মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চাকরি করা অবস্থায় ফার্মেসী খুলে তখন থেকে মানুষের সাথে এভাবেই প্রতারণা করে আসছে ভবেশ চন্দ্র কর। প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক রুগি দেখেন। ভবেশের আরেকটি প্রতারণা হচ্ছে ওষুধের দামের সাথে যোগ করে ভিজিট নিয়ে থাকেন তার কর্মচারীর মাধ্যমে। কার কাছ থেকে কতটাকা ভিজিট নেয় তাও বলেনা। কিছুদিন আগে এক রুগির কাছ থেকে ওষুধের দামের থেকে প্রায় সাড়ে ৫শত টাকা বেশি নিয়েছে। ওই রুগি অন্য জায়গা থেকে ওষুধের দাম যাচাই করে এসে ভবেশের সাথে তর্কে জড়ায় । পরে সে ১০০টাকা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেন। কালিহাতী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত চর্মরোগের ডাক্তার না থাকায় রুগিরা ভবেশ চন্দ্র করের কাছে ভীড় জমায়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের উপস্থিতি থাকলে মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসতোনা।

ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর জানান, একসময় সে নিজেই ছিলেন চর্মরোগের রুগি। মধুপুরের জলছত্র হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় ডাক্তারদের সাথে তার সম্পর্ক তৈরী হয়। পরে ডাক্তারের সহকারীর চাকরি নেন। ডাক্তারের সাথে থাকার সুবাদে চিকিৎসা দিতে শিখেছেন তিনি। পরে ফার্মেসী খুলে কর্মচারী রেখেছেন। সময় পেলে এসে রুগি দেখতেন। এভাবেই চলছে কয়েকযুগ ধরে।

তিনি জানান, মাঝে ২বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে পাস করতে পারেননি। পরে আর পরীক্ষা দেননি। জলছত্র হাসপাতাল থেকে অবসরের পর ৬মাস একটি ক্লিনিকে ম্যানেজারের চাকরি করেছেন। এরপর থেকে ফার্মেসীতে বসেই রুগি দেখেন।

প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লেখার বিষয়টি অস্বীকার করে ভবেশ চন্দ্র কর জানান, প্রেসক্রিপশনগুলো ওষুধ কোম্পানীর লোকেরা দিয়ে থাকে তারা ভুল করে দিয়েছিলো। পরে তা ফেরত দিয়েছি। রুগিদের কাছ থেকে ১০০টাকা করে ভিডিট নেন জানিয়ে তার ভুল স্বীকার করে আর কখনো প্রেসক্রিপশন করবেননা বলে জানান ভুয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. রাহাত হোসেন জানান, চিকিৎসক না হলে কারো প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রেসক্রিপশন না করার কথা বললেও এখনো প্রতিদিন আগের মতোই প্রেসক্রিপশন করে রুগি দেখছেন ভূয়া চিকিৎসক ভবেশ চন্দ্র কর।

 

এম.কন্ঠ/ ০৮ ডিসেম্বর /এম.টি