স্বাধীনতার ৫০ বছরে টাঙ্গাইল ফুটবল ক্রিকেটের ইতিকথা
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কতটা বয়স বাড়ল টাঙ্গাইল ক্রীড়াঙ্গনের? স্বাধীনতার ৫০ বছরে টাঙ্গাইলের ফুটবল ও ক্রিকেট কতোটা এগিয়েছে? ফুটবলে বর্তমানে সাফল্যের র্শীষে পৌছাতে পারলেও ক্রিকেটে যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু সেটুকু এগিয়ে যায়নি। টাঙ্গাইলের ক্রিকেট অংকুরেই পড়ে আছে। এখন সঠিকভাবে পরিচর্চা করলেই বৃক্ষটা বড় হবে,ফুল ফুটবে! ।
ঢাকা হলো ক্রিকেটের স্বর্গ। সেই স্বর্গ থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্ব কতোটা নিকটবর্তী অথচ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে টাঙ্গাইলের একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় আজও স্থান করে নিতে কিংবা দলে ডাক পাননি। অথচ ফুটবলে সাফল্যের ধারা সবসময় বর্তমান। বর্তমান জাতীয় ফুটবল দলে ৪ জন ফুটবলার খেলার মধ্যে মধ্যে আছে। তারা হলো সুমন রেজা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রবিউল হাসান ও রফিকুল ইসলাম । ফুটবলে ধারাবাহিকতা থাকলেও ক্রিকেটে জাতীয় দলে অংশগ্রহনে সাফল্যে শুন্য কোটায়। সর্বশেষ ডাক পেয়েছিলেন মেহেদী মারুফ। ঢাকা বিপিএলে একবারের সাফল্যে অস্ট্রেলিয়াগামী টিটুয়েন্টি দলে স্টান্ডবাই খেলোয়াড় হিসেবে দলের সাথে ছিলেন। বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে ক্রিকেটে টাঙ্গাইল জেলার সাফল্য কমবেশী আছে। কিন্তু আসল ক্ষেত্র জাতীয় দলে টাঙ্গাইলের একজন ক্রিকেটার পারফরমেন্স করবে। আমরা তাকে নিয়ে উচ্ছাস করবো, গর্ববোধ করবো, তাকে নিয়ে টাঙ্গাইলের ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়ার পথরচনা করবে। কিন্তু না, এরকম কিচ্ছু হচ্ছে না। টাঙ্গাইলের ক্রিকেট ওই বয়স ভিত্তিক পর্যায়েই আছে।
অনুর্ধ্ব-১৮ বয়স ভিত্তিক খেলার পর সেই খেলোয়াড়কে জাতীয় পর্যায়ে কিংবা ঢাকার ক্রিকেট স্বর্গে তাকে আর পাওয়া যায় না। সে হারিয়ে যায়। তাকে শুধু দেখা যায় টাঙ্গাইল ক্রিকেট লীগে। সেখানেই হয়ত বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে যা শিখোছিলো তার কিছুটা প্রয়োগ করে ক্রিকেট লীগ বা টুর্নামেন্টে পারফরমেন্স করে সীমিত দর্শকের হাততালি কুড়ায় আর কিছুটা অর্থ পায়। এভাবে কয়েক বছর খেলার পর সে হারিয়ে যায়। সে ঢাকার ভালো ক্লাব পর্যায়ে যেতে পারে না। কিংবা ক্লাব পর্যায়ে যেতে তার যেটুকু ফিটনেস ও পারফরমেন্স দরকার সেই টুকু তার থাকে না। একসময় সে হতাশ হয়ে হারিয়ে যায় এবং ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে জীবন জীবিকার জন্য অন্য পেশায় পথ মাড়ায়। জানা গেছে ৯০ দশকে টাঙ্গাইলের ক্রিকেটে একটা জোয়ার ছিল।
সেই জোয়ারে ১০ থেকে ১৫ জন ক্রিকেটার ঢাকার শীর্ষ পর্যায়ে খেলেছে। তবে নামদামী ক্লাবে নয়। সেই সব ক্লাব থেকে জাতীয় দলে সুযোগ করে নিতে পারেনি। সেই সময় টাঙ্গাইলের থানাপাড়ার পেস বোলার কোটায় জয়দেব বসাক প্রথম ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে খেলে সুনাম কুড়িয়েছেন। খেলা থেকে অবসর নিয়ে তিনি ভারতে চলে গেছেন। এরপর শীর্ষ পর্যায়ে এবং সবচেয়ে ভালো অবস্থান তৈরী করেছিলেন থানাপাড়ার মেধাবী ক্রিকেটার সাজ্জাদ কাদির। ঢাকার পিডব্লিওডি, সিটি ক্লাব হয়ে খেলেছেন চ্যাম্পিয়ান বাংলাদেশ বিমানে। বাংলাদেশ বিমানে তিনি উইকেট রক্ষক কাম ব্যাটসম্যান ছিলেন। তার ঢাকা আবাহনী ও মোহামেডানের বিপক্ষে উইকেট কিপিংএর পাশাপাশি ভালো ব্যাটিং করার নজির আছে। তিনি এখন বিমান এয়ার লাইসেন্সে চাকরী করছেন। সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলেন কুন্তল চন্দ্র পাপন।
প্রতিভার নৈপুন্য তিনি দেখিয়েছেন ঢাকার শীর্ষ দল আবাহনী ক্রীড়া চক্রে। খেলেছেন ২০০০ সালে শ্রীলংকায় যুব (অনুর্ধ্ব-১৯) বিশ্বকাপ ক্রিকেটে। শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে পাপনের সঙ্গী ছিল আকুরটাকুর এলাকার অপস্পিন বোলার কাম ব্যাটসম্যান আবু নাসের মানিক। মানিক যুব বিশ্বকাপের পর ঢাকা পিডব্লিওডি, ওয়ান্ডারার্স ও লালমাটিয়াতে ২০০১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত খেলেছেন। পাপন ছিলেন ভালো উইকেট রক্ষক ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। ঢাকায় আবাহনী ক্লাবে খেলতে গিয়ে মিরপুর বেড়িবাধে বেড়াতে গেলে ছিনতাইকারী ছুড়ির আঘাতে অকালে মারা যায়। খেলেছেন পাপনের সহোদর বড়ভাই কৌশিক চন্দ্র টোকন, ইসলাম খান, তাপস বসাক,সুশান্ত(ডানো), উত্তম সরকার, নির্মল দত্ত, রিপন সরকার, সুমন সরকার, মদন, দিপকজল সরকার রবিন, মুরাদ, ইমতিয়াজ আহমেদ, অভিজিৎ দত্ত, ভুপেনন্দ্রনাথ বাবু, মামুন, মাতিনুজ্জামান সুখন, সৈকত প্রমুখ।
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ও বিপিএল খেলছেন মেহেদী মারুফ ও নাজমুল হোসেন মিলন। মেহেদী মারুফ তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার। যিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্কটবর্তী হয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়াগামী সফরে জাতীয় দলে স্টান্ডবাই হিসেবে গিয়েছিলেন। বিপিএল চ্যাম্পিয়ন ঢাকার দলে সদস্য ছিলেন মেহেদী মারুফ। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ঢাকার পক্ষে খুবই ভালো ব্যাটিং করেছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখ করার মতো বরিশালের বিপক্ষে ৭৫ রান। তিনি ঢাকা কাঁঠালবাগান ক্লাব থেকে ক্রিকেট যাত্রা শুরু করে ইন্দিরা রোড, প্রাইম দেলেস্বর, শেখ জামাল, রুপগঞ্জ,গাজীগ্রুপ খেলেছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে তার ৮টি সেঞ্চুরী আছে। সিলেটে জিম্বাবুয়ে জাতীয় দলের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন। মেহেদী মারুফ বর্তমানে ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের গাজী গ্রুপের অধিনায়ক। নাজমুল হোসেন মিলন ছক্কা মিলন নামে খ্যাত প্রাইম ব্যাংক, রুপগঞ্জ, পারটেক্্র ও মোহামেডানে ২ বছর খেলেছেন।
এছাড়া যুব বিশ্বকাপে উদ্বোধনী ব্যাাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি কুড়ানো জয়রাজ শেখ ইমনের পাশাপাশি বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভালো পারফরমেন্স দেখিয়ে যাচ্ছেন অনুর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে ডাক পাওয়া রিজান হোসেন ও দেবাশীয় সরকার। এছাড়া টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন, তারা হালো ইমতিয়াজ আহমেদ, তারেক, মুন তালুকদার,লোহিত, মাঈন, তুহিন, জহির ও প্রীতম। বর্তমানে টাঙ্গাইল ক্রিকেট লীগে যেসব খেলোয়াড় বিভিন্ন দলে খেলেছে তারা হলো সাজিব, শাহীন ,রজিন, আদনান, সানি, সুমন, নাবিল, ইয়াসির আরাফাত, টিপু, মুন্না, আদনান, রকি, পার্থ, সোহেল, তুহিন, লিমন, শামিউল,সোহাগ, সালাম,রাফসান জানী, শাহীন, সানি, রনি, তাসিন, সাদ্দাম মনির, শিপলু, উদয়, বিজয়, নিশাত, সোহাগ, সানি, রাফি, আজাদ, রাসেল, সুমন, প্রিতম, টিটু, রিফাত, রিয়াসাত, তুষার, সজল, ফাহাদ, সৈকত, মুন্না ,রাকিব, জহির, সজিব, রিয়াদ, রজিন, জসিম, সাইফ, রাহাত, রওনক হরিজন, সুমন, রাকিব, শান, সবুজ, নাজুমল হোসন দিপু, আরিফ, তুষার সিদ্দিকী, রবিন সরকার, শিশির, শক্তি, আশিক, অন্তর, সেলিম, নাজিম উদ্দিন রিফাত, ইফতি, মাইন, তানভীর, হাসান, সাদি, লোহিত, হৃদয়, সুমন, রাসেল খান, দ্রব, হামিম, রাজিব, খালিদ, মুগ্ধ, আরিফ হোসেন মুন, সোহাগ, দেবাশীষ, জনি, আবির, সাগর, রিফাত, আরিফ, মেহেদী, উত্তম, সজিব,রানা, জয়, রাহাত, জুবায়ের, তপু, সাদেক খান, নাসির, অনিক, নয়ন, র্পাথ, সাব্বির, আরিফ, সজিব, রেকাব, অনিক, মিলন, সুজন, সাদ্দাম, বিদ্যুৎ, তাজামুল, নাহিদ, সোহাগ, রাসেল, সালমান, রিমন, শান, পাপ্পু, সকাল, জনি, রাফি, উদয়, হৃদয়, দিপু, রিফাত, সজিব শেখ, আসাদ,শফি, সুমন সরকার প্রমুখ।
এরা টাঙ্গাইল ক্রিকেট লীগে খেললেও জাতীয় পর্যায়ে যেতে নিজেকে কিভাবে তৈরী করতে হবে সেটা জানে না। বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে ভালো খেলার পর হারিয়ে যায়। সাবেক ক্রিকেটার ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাতিনুজ্জামান সুখন, ঢাকায় সিটি ক্লাবে খেলেছেন। তিনি বলেন“ এদের হারিয়ে যাবার পিছনে ওদের চাহিদা, পরিকল্পনা ঠিক থাকে না। ওরা অল্পতে তুষ্ঠ থাকে। কঠোর পরিশ্রম করে ফিটনেস ধরে রাখতে পারে না। অনেকেই টেপ টেনিস ক্রিকেট ক্ষ্যাপ খেলে বেড়ায়, যেটা ভালো ক্রিকেট খেলায় অন্তরায়। টাঙ্গাইলের ক্রিকেটার মনের জোর কম। ওরা ঢাকায় খেলতে পৃষ্টপোষকতা খুঁজে বেড়ায়, ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। বেশী বেশী ম্যাচ খেলতে হবে। আমরা অনুর্ধ্ব-২১, ২২,২৩ পর্যায়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করার চেষ্ঠা করছি। চেষ্ঠা করছি গ্রাম অঞ্চলেও ডিউজ বলে টুর্নামেন্ট চালানো। আমরা আশাবাদী প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা দ্রুত জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে পারবে”। জাতীয় দলে টাঙ্গাইলে পক্ষে কোন ক্রিকেটার স্থান করে নিতে না পারলেও টাঙ্গাইলে এখন পড়ালেখা শেখানোর মতো গড়ে উঠেছে ক্রিকেট শেখার প্রতিষ্ঠান।
টাঙ্গাইল জেলা কোচ আরাফাত রহমানের স্পোর্টস একাডেমী, ইসলাম খানের টাইগার ক্রিকেট একাডেমী রয়েছে। ক্রিকেট কোচ হিসেবে মরহুম সৈয়দ জালাল, রাজিব, রাসেল খান, রিপন সরকার, শামীম এ পেশায় নিজেদের তুলে ধরেছেন। টাঙ্গাইলে হাজার খানেক ছাত্র ছাত্রী বিভিন্ন ক্রিকেট কোচিং ভর্তি আছেন। এখানে নারী ক্রিকেটার সংখ্যা কমই হলেও টাঙ্গাইলের ৭-৮ জন নারী ক্রিকেটার ঢাকার প্রমিলা ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করছে। পিউ নামে আদি টাঙ্গাইলের প্রমিলা ক্রিকেটার বাংলাদেশ ক্রীড়া সংস্থায় সুযোগ পেয়েছে। সে হয়ত প্রমিলা জাতীয় ক্রিকেটে অবদান রাখতে পারবে। বর্তমানে সারা বিশ্বের মতো টাঙ্গাইলের ক্রিকেট বাজার রমরমা অথচ একটা সময় জনপ্রিয় ক্রিকেট এতটা প্রচার ও প্রসার ছিল না। টাঙ্গাইলে এই খেলার প্রচলন ইংরেজ আমল থেকেই কিন্তু এই খেলা সীমিত গণ্ডীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ক্রমশ টাঙ্গাইলে এই খেলা প্রসার লাভ করতে থাকে। সার্বিক ভাবে টাঙ্গাইলে এই প্রচলন হয় ১৯৫৩ সনে ময়মনসিংহ একাদশকে আমন্ত্রনের মাধ্যমে।
টাঙ্গাইলের ক্রিকেটের মানোন্নয়নের সাথে এই উদ্যোগ গ্রহন করেন মরহুম এস আজগর খান সাহেব। দেলদুয়ারের হাসান আলী, গজনবী ও শ্রী যতীন দেব ও তদানিন্তন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অনিল চৌধুরী। তারাপদ দে, হাসান আলী প্রমুখ ক্রিকেটার গন সেই সময়ে খেলে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে যারা ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়েছেন তারা হলেন আমিরুল ইসলাম খান, মরহুম নজরুল ইসলাম খান, ফারুকুল ইসলাম খান, গোলাম রহমান ডল, স্বপন মন্ডল, গোলাম রসুল মোল্লা, সাহানুর ইসলাম খান, আতোয়ার রহমান খান, পরিমল নন্দী, হীরন, আতা খান, সংকর নন্দী, মাসুদ(সূর্য), লুলু, নাদু, অমল বসাক, আজাদ, সহিদুল ইসলাম খান, বলা দত্ত, জামিলুর রহমান মিরন, নৃপেন প্রমুখ। এখানে উল্লেখ্য যোগ্য যে, নজরুল ইসলাম ইসলাম সর্বপ্রথম টাঙ্গাইলের ক্রিকেটের ইতিহাসে লীগ খেলায় প্রথম শতরান করার গৌরব অর্জন করেন। তার রান ছিলেন ১০৫ নটআউট। ইহার পর স্বপন সরকার একটি শতরান করেন। (১০০) । ইহার পর প্রায় পনের বছর পর ১৯৮৩ সালে তিন নম্বর শতরান করেন চন্দন সরকার। ১৯৬০ সালের পর ক্রিকেট খেলাকে আরও উন্নত করার তাগিদে সচেষ্ট হন নজরুল ইসলাম খান, আমিরুল ইসলাম খান, ফারুকুল ইসলাম খান, চঞ্চল নন্দী, মাখন সিদ্দিকী, অনিল দাস, শাহানুর ইসলাম খান। তারা টাঙ্গাইল ক্রিকেট সমিতি নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করেন। তখন থেকেই টাঙ্গাইলে সর্বপ্রথম ক্রিকেট লীগ খেলার প্রচলন হয়। নজরুল ইসলাম খান ঢাকায় আজাদ স্পোটিং ও শান্তিনগর এর পক্ষে এবং ময়মনসিংহ এর পক্ষে খেলে কৃতীত্ব দেখিয়েছেন। স্বপন কুমার মন্ডল ময়মনসিংহ পন্ডিত পাড়া ক্লাব এবং ঢাকার আজাদ স্পোটিংয়ে পক্ষে খেলেছেন। পরবর্তীতে আমিরুল ইসলাম খান, ফারুকুল ইসলাম খান, গোলাম রহমান ডল, গোলাম রসুল মোল্লা আজাদ স্পোটিংয়ে খেলেছেন। তখনকার দিনে কারদার সামার ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় শুধুমাত্র জেলা দল অংশ গ্রহন করতো।
টাঙ্গাইল মহকুমা ক্রিকেট দল এই টুর্নামেন্টে খেলে বহু কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছে। স্বপন কুমার সরকার বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। মাজহারুল ইসলাম খান বাবলু ১৯৮২ এবং ১৯৮৩ সালে রুপালী ব্যাংকের হয়ে এবং ১৯৮৪ সালে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে খেলেছেন। টাঙ্গাইলের সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের সাথে কথা জানা যায়। জাতীয় দলে কিংবা ঢাকার ক্লাব পর্যায়ে কেন টাঙ্গাইল ক্রিকেটারগণ পিছিয়ে আছে? সাবেক ক্রিকেটার সাজ্জাদ কাদির বলেন“ জাতীয় পর্যায়ে খেলতে গেলে তার উচুঁ র্টাগেট থাকতে হবে, পর্যাপ্ত সাধনা থাকতে হবে। টাঙ্গাইলের ক্রিকেটের অবকাঠামো বর্তমানে শক্ত নয়, আমরা যখন খেলতাম তখন ছিল, এখন ক্রীড়া সংস্থা সুন্দর, মাঠ সুন্দর কিন্তু ক্রিকেটের অবকাঠামো নাই। যে সব খেলোয়াড় ঢাকায় খেলেছে সেই সব সাবেক ক্রিকেটারদের মূল্যায়ন নাই, তারা এখানে যুক্ত নাই। এখানে সাবেক ক্রিকেটারদের যুক্ত করা দরকার, তারা মাঠ নিয়ন্ত্রন করবে, তাদের হাতেই ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। বর্তমানে যারা আছেন তাদের আরেকটু বেশী চিন্তাভাবনা করতে হবে, নিত্য নতুন কৌশনের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবেই ক্রিকেটের উন্নয়ন হবে। বয়স ভিত্তিক খেলা হলো প্রাথমিক পর্যায়, বয়স ভিত্তিকের পরই তাদের আসল খেলা খেলতে হবে। এই জন্য সাবেক ক্রিকেটারদের পরামর্শ নিতে হবে। এখানে নতুন ক্রিকেটারদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ আছে কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের জন্য আরো সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া উন্নত হতে হবে। আশাকরি টাঙ্গাইলে ক্রিকেট অবশ্যই ভলো হবে।” ২০০২ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগহকারী (৩৪টি) অগ্রনী ব্যাংক, সিটি ক্লাব ও আজাদ ক্লাবের রাসেল খান ও কৌশিক চন্দ্র টোকন বলেন“ শৃঙ্খলা মত জীবন যাবন, প্রচুর ম্যাচ ক্রিকেট খেলতে হবে। ফিটনেস ঠিক রাখতে হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা যেভাবে ক্রিকেট লীগ চালায়, সেটা পরিমানে খুবই কম। আসলে ক্রিকেটের জন্য একটা মাঠ থাকলে ভালো হয়। ভালো মানের লীগ আয়োজন করতে হবে। উন্নত মানের উইকেট তৈরী করতে হবে। ভালো মানের কোচও দরকার। ক্রিকেটের জন্য ভালো মানের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্রিকেটারদের লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে। ক্রিকেট নিয়ে সাধনা করতে হবে। তবেই সাফল্য আসতে পারে।” বর্তমান তারকা ক্রিকেটার মেহেদী মারুফ ও নাজমুল হোসেন মিলন বলেন“ জাতীয় পর্যায়ে খেলতে টাঙ্গাইলের ক্রিকেটারগন কেন সুযোগ পায় না। তাদের মতে এ পর্যায়ে খেলতে যোগ্য অভিভাবক লাগে।
অভিভাবকরা যদি প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দিতে পারে, তবে অবশ্যই টাঙ্গাইলের ক্রিকেটারগন জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পাবে। প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের একটা দুইটা ম্যাচ নয় দুই চারটা ম্যাচের সুযোগই পারবে সাফল্যের সোপানে নিয়ে যেতে। তবে ক্রিকেটারকে প্রচুর যত্ন নিয়ে ক্রিকেটকে ধ্যানজ্ঞান মনে করে খেলতে হবে।” সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল আলম রফিক বলেন“ অনিয়মিত ক্রিকেট লীগ আয়োজন, ক্রিকেটাদের লক্ষ্য পৌছানোর মানসিকতা নেই। অল্পতে তারা ধৈর্যহারা হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে যায়। এভাবে চললে টাঙ্গাইল ক্রিকেট থেকে মানসম্পন্ন জাতীয় দলে খেলার যোগ্য ক্রিকেটার গড়ে উঠবে না। নিয়মিত মান সম্পন্ন লীগের পাশাপাশি মেধাবীদের নিবিড় প্রশিক্ষণে গড়ের তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। ক্লাবের সংখ্যা কম থাকায় অনেক নতুন খেলোয়াড় সুযোগ পাবে না, নতুন ক্লাব অন্তভূক্ত করতে হবে। খেলোয়াড়দের ছোটখাট সমস্য হলে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে। তবেই টাঙ্গাইল থেকে জাতীয় দলে দরজায় ক্রিকেটারা নক করতে পারবে। টাঙ্গাইল ক্রিকেট মাঠে খেলার ভেন্যু করে টাঙ্গাইলের ক্রিকেটের লাভ নেই বরং ওই সময় বেশী বেশী বয়সভিত্তিক কিংবা ক্লাবের ক্রিকেটকে ১২ মাস মাঠে রাখলে ফলাফল আসবেই। সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ, অরিন্দম পাল লিটন, যিনি বর্তমানে ঢাকায় আজাদ স্পোটিং ও দ্রব স্পোটিং এর কোচিংয়ে প্রধান কোচ। তিনি বলেন“ টাঙ্গাইলের ক্রিকেট আগের তুলনায় পিছিয়েছে, অথচ বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটার্স পাওয়ার সারা বাংলার জোয়ারে টাঙ্গাইলে ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু জোয়ার আসলেও জাতীয় দলে খেলার মতো ক্রিকেটার তৈরী হয়নি।
টাঙ্গাইলের ক্রিকেটারা প্রথমে ভালো খেলার লক্ষ্য নিয়ে নামলেও পরবর্তীতে সেই ভালো খেলার র্টাগেট ধরে রাখতে পারে না। এখানে ফিটনেস, ক্রিকেটার টেপটেনিস খেলা আর ক্ষ্যাপ খেলাতো আছেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তাদের পিছনে পর্যাপ্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করে না। জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় প্রস্তুত করতে চাইলে ওদের পিছনে ভালো মানের কয়েকজন কোচ নিয়োগ দিতে হবে। তবেই হয়ত সাফল্য আসবে বলে আমি মনে করি। ”
টাঙ্গাইল জেলা কোচ আরাফাত রহমান বলেন“ বয়সভিত্তিক খেলায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা এক নম্বরে আছে। আমাদের রিজান, দেবাশীষ, রাফসান জানি, ইমতিয়াজসহ অনেকই পাইপ লাইনে আছে। তারা অচিরেই শীর্ষ ক্লাবে খেলার পাশাপাশি জাতীয় দলে স্থান করে নিতে পারবে। ” জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু বলেন“ সত্যি স্বাধীনতার ৫০ বছরে টাঙ্গাইল থেকে জাতীয় দলে খেলার মতো ক্রিকেটার গড়ে উঠেনি, তবে বর্তমানে অনেকেই বয়সভিত্তিক পর্যায় ভালো খেলছে, ২০২১ মৌসুমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত বয়স ভিত্তিক অনুর্ধ্ব-১৮ ফাইনালে ময়মনসিংহ জেলাকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরাই প্রিমিয়ার লীগে খেলে জাতীয় দলে স্থান করে নিবে আমি আশাবাদী। ”
সবশেষে জানাই জাতীয় দলের খেলার মতো জেলা ক্রীড়া সংস্থার তথ্য বিভাগ বিভিন্ন টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের নাম জেলা সংরক্ষণের নির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা রাখেননি। যে কেউ চাইলেই এই তথ্য ক্রীড়া সংস্থা দিতে পারছে না। তারপরও কিছু তথ্য জেনেছি যা নিম্নে দেওয়া হলোঃ থানাপাড়া ক্লাব কতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেটা সঠিক কেউ বলতে পারেনি এবং ক্লাবের কর্মকর্তাগনও, তারা শুধু থানাপাড়া লীগের সবচেয়ে বেশীবার চ্যাম্পিয়ন। ২০০৯ সালের পর যে কয়টি লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে র্সবশেষ ২০২০-২১ সেশনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রগতিশীল স্বদেশী সংঘ। প্রগতিশীল স্বদেশী সংঘ এর পূর্বে ৩বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কাপাপো ক্রীড়া চক্র ২০১৯-২০ ও ২০১১-১২ সালে দুবার চ্যাম্পিয়ন। মসজিদ রোড ক্লাব ১৯৯২-৯৩ ও ১৯৯৩-৯৪ সালে দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়। সিটি ক্লাব ২ বার চ্যাম্পিয়ন। থানাপাড়া ইস্টার্ণ স্পোটিং ক্লাব একবার চ্যাম্পিয়ন।
টাঙ্গাইল জেলার ক্লাব রোডে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্টেডিয়াম। এটি টাঙ্গাইলের ভাসানী হল ঈদগাহ্ মাঠের উত্তরে, শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের পশ্চিম পাশে ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত। এ স্টেডিয়ামে ফুটবল, ক্রিকেট, এ্যাথলেট, ভলিবল ও কাবাডি সহ কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
টাঙ্গাইল বাসী খেলাধূলা করতে এবং দেখতে ভালোবাসে। টাঙ্গাইল বাসী অপেক্ষায় আছে ফুটবল জাতীয় দলের মতো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে একসময় তারকার ছড়াছড়ি দেখা যাবে। সেই ক্রিকেটার নিয়ে টাঙ্গাইলবাসী গর্ব করে বলবে“ আমাদেরও একজন সাকিব আল হাসান আছে”, যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করে।
এবার কথা বলবো ধারাবাহিক সাফল্যে টাঙ্গাইলে ক্রীড়াঙ্গনকে উর্ধে তুলে রাখা ফুটবল নিয়ে। বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে থাকলেও বাংলাদেশের মাটিতে টাঙ্গাইলের ফুটবল সাফল্যের র্শীষে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে টাঙ্গাইলের ফুটবল এক কথায় অনেক এগিয়েছে। সারা বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশ র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও সারাদেশের তুলনায় টাঙ্গাইল জেলার ফুটবল অনেক এগিয়ে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলে একত্রে খেলছেন বিশ্বনাথ ঘোষ, রফিকুল ইসলাম, সুমন রেজা, রাসেল মাহমুদ লিটন, রবিউল ইসলাম ও রায়হান হোসেন। এর মধ্যে লম্বা থ্রো করার অধিকারী সন্তোষের ডিফেন্ডার রায়হান জাতীয় একটানা ৯ বছর খেলছেন। বর্তমানে রায়হান খেলেছেন ঢাকার অন্যতম ক্লাব শেখ জামাল ক্লাবে, এর পূর্বে টানা ১০টি বছর খেলেছেন প্রতিষ্ঠিত ক্লাব আবাহনী ক্রীড়া চক্রে। বিশ্বনাথ ঘোষ ও সুমন রেজা বসুন্ধরা ক্লাবে, রবিউল হাসান চ্রটগ্রাম আবাহনীতে, রাসেল মাহমুদ লিটন শেখ রাসেলে, শীতল ও লিটন বর্মন পুলিশ দলে, ইলিয়াস, জগন্নাথ ও সৃমদ্ধ বর্মন মুক্তিযোদ্ধায়, গোলরক্ষক মাসুম শেখ জামালে, অনিক মোহামেডানে, জুবেল, লিমন ও রবিন বারিধারা ক্লাবে, মানিক সাইফ স্পোটিং ক্লাবে, খলিল ভুইয়া রহমতগঞ্জে। সখিপুর উপজেলার দক্ষ ডিফেন্ডার মামুন মিয়া আবাহনী ক্রীড়া চক্রে খেলেছেন প্রায় ১৫ বছর, খেলেছেন জাতীয় দলে। ঘাটাইল উপজেলার জাহিদ হোসেন মধ্যমাঠের প্রতিশ্রতিশীল খেলোয়াড়। তিনি ঢাকা মোহামেডান, আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলে খেলেছেন ।
জাতীয় দলে নির্ভরযোগ্য মধ্যমাঠের খেলোয়াড় ছিলেন। এখনও খেলেছেন। এছাড়া ঢাকায় চ্যাম্পিয়নশীপ লীগে নাজমুল ইসলাম রাসেল, আসলাম, আলামিন, মজনু,বিষ্নু খেলেছেন। প্রায় ১৮ জন টাঙ্গাইলের ফুটবলার ঢাকার প্রিমিয়ার লীগে খেলছে। ঢাকার বিভিন্ন দলে খেলার অপেক্ষায় শিহাব, রফিক, মিশু, আরিফ, শাওন কুবি, রেজাউল করিম ভাগ্য, শাহিন, ইউসুফ ও সাদেক। টাঙ্গাইলে আছেন ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকার মানুষ থানাপাড়ার আতিকুর রহমান জামিল। তিনি ফুটবলকে ভালোবেসে ফুটবলকে জড়িয়ে টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম সংলগ্ন নদীর ধারে টিনের দোচালা ঘরে ফুটবল ক্যাম্প করেছেন। এই ক্যাম্পে কোচ আতিকুর রহমান জামিল ও বিভিন্ন এলাকার ও বিভিন্ন বয়সের সকল ফুটবলার বসবাস করেন। প্রতিদিন সকাল বিকাল অনুশীলন করেন। কোচ জামিল তাদের হাতধরে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে কিংবা প্রয়োজনে ধমক দিয়ে ফুটবল শেখান। বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল প্রতিভা জন্ম নেওয়া ফুটবলার সন্ধান পেলে কোচ জামিল তাকে তার একাডেমীতে নিয়ে আসেন। এখান থেকে অনেক তারকা খেলোয়াড়ের জন্ম হয়েছে। জাতীয় দল ও আবাহনী ক্রীড়া চক্রের রায়হান হোসেন, ৯০ দশকের মোহামেডান ও জাতীয় দলের সাদেকুল ইসলাম উত্তম, বসুন্ধরার বিশ্বনাথ ঘোষ,রাসেল মাহমুদ লিটন, গোলরক্ষক মাসুম, হাবিব, আতিক, শীতলসহ অনেকেই তারই সৃষ্টি। তার ফুটবল একাডেমীতে সব সময় ৩০ থেকে ৪০ জন খেলোয়াড় থাকেন। নির্ধারিত নিজস্ব মাঠের অভাবে তিনি তাদের টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকার মাঠে প্রাকটিস করান এবং বিভিন্ন এলাকার ফুটবল টুর্নামেন্টে সেই সব খেলোয়াড়দের খেলিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করান।তিনি বলেন বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এবং একাডেমীর খরচ তিনি চালান। এছাড়া উপজেলা পর্যায় থেকে ফুটবলার উঠে আসছে। তারা টাঙ্গাইলের ফুটবল লীগ, টুর্নামেন্টে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ক্লাবে চলে যাচ্ছে।
এক যুগ আগে টাঙ্গাইলের যে ফুটবলার ঢাকার লীগের খেলে বেড়াতো তারা টাঙ্গাইলের ঘরোয়া লীগেও অংশগ্রহন করতে পারতো কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নিয়মের বেড়াজালে বর্তমানে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ফুটবলারগন স্থানীয় লীগে খেলতে পারে না। যে কারনে টাঙ্গাইলের ক্রীড়ামোদী দর্শকেরা আগের মতো মাঠে আসেন না। দর্শকের দাবী“ কাদের খেলা দেখতে আসবো? আমরাতো তারকা ফুটবলারদের খেলা দেখতে চাই, দেখতে চাই জাতীয় দলের ফুটবলারদের খেলা”। এসব কারনে অনিয়মিত ফুটবল লীগে এখন আগের মতো দর্শক হয় না। একসময় টাঙ্গাইলের ফুটবল দেখতে স্টেডিয়ামে কানায় কানায় দর্শক ভরা থাকতো। ঢাকার বড় বড় ক্লাব গুলো এই মাঠে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করতো। ১৯৮০ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল ইসলাম জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ আয়োজন করে ফুটবলে নবজাগরণ সৃষ্টি করেন। তখন থেকেই ক্রীড়ামোদী দর্শকে ভরপুর থাকতো টাঙ্গাইলের স্টেডিয়াম। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯১ সাল টুর্নামেন্ট চলার মাঝে এক যুগ পর ২০০৪ সালে আবারো আয়োজন হয়। বর্তমানে এক যুগ পার হলেও জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট হারিয়ে গেছে। রোল অব অনার-জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপঃ ১)১৯৮০ সালঃ আবাহনী, টাঙ্গাইল ও কালেক্টরেট, টাঙ্গাইল যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন। ২) ১৯৮১ সালঃ আজাদ স্পোটিং ক্লাব চাম্পিয়ন, ঢাকা ফরাশগঞ্জ ক্লাব রানার্সআপ। ৩) ১৯৮২ সালঃ ডক ইয়ার্ড(নারায়ণগঞ্জ) চ্যাম্পিয়ন, রহমতগঞ্জ, ঢাকা রানার্সআপ। ৪) ১৯৮৩ সালঃ কাস্টমস এন্ড এক্্রাইজ,ঢাকা, চ্যাম্পিয়ন, ঢাকা লালবাগ ক্রীড়া চক্র রানার্স আপ। ৫) ১৯৮৪ সালঃ কাস্টমস এন্ড এক্্রাইজ,ঢাকা, চ্যাম্পিয়ন, ইস্ট এন্ড ক্লাব, টাঙ্গাইল রানার্স আপ। ৬) ১৯৮৯ সালঃ কাস্টমস এন্ড এক্্রাইজ,ঢাকা, চ্যাম্পিয়ন, ঢাকা ব্রাদার্স ইউনিয়ন রানার্স আপ। ৭) ১৯৯১ সালঃ ঢাকা আবাহনী ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন। ৮) ২০০৪ সালঃ ঢাকা মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ- চ্যাম্পিয়ন, ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্র রানার্সআপ।
বর্তমানে উঠতি ফুটবলার নিয়ে ফুটবল লীগ, উপজেলা টুনামেন্ট ও বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্ট চালু হলেও দেখার মতো দর্শক উপস্থিতি খুবই কম। ১৯৯৬ সালে জাপানে (অনুর্ধ্ব-১৬) এএফসিকাপ টুর্নামেন্টে খেলে আসা টাঙ্গাইলের আকুরটাকুর পাড়ায় জন্ম নেওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের ডিফেন্ডার আব্দুল খালেক শিপন বলেন“ টাঙ্গাইলের লীগের মান মানসম্মত নয়। লীগের নামে টুর্নামেন্ট চালায়। রেফারীদের পক্ষদূষ্ট রেফারীং, তারকা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি মাঠে ক্রীড়ামোদী দর্শকের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। ” এ ব্যাপারে প্রয়াত ফুটবল কোচ আতিকুর রহমান জামিল বলেছিলেন“ এটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের চাহিদামত, যাতে নতুন ফুটবলার উঠে আসে।” জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মির্জা মঈনুল হোসেন লিন্টু আতিকুর রহমান জামিলের সাথে এ ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন“এতে নতুন ফুটবলাররা খেলার সুযোগ পাচ্ছে, তারা নিজেদের তৈরী করতে পারছে। বর্তমানে জাতীয় দলে টাঙ্গাইলের ফুটবলার পারফরমেন্স করেছেন এটা টাঙ্গাইলের ফুটবল অনেক এগিয়ে এটা তার প্রমাণ। টাঙ্গাইল থেকে ফুটবলার উঠে আসবে।”। তিনি আশাবাদী এবার আরো বেশী করে বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন করবেন।
ফুটবলে টাঙ্গাইল অতীতেও গৌরবময় অবদান রেখেছে। টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন খেলোয়াড় বিভিন্ন সময়ে ফুটবলে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। এদের মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখ করা যায় মরহুম কালু খাঁ নাম। যিনি কালু নানা নামে পরিচিত ছিলেন। এই শতকের ত্রিশ দশকে তিনি কলকাতা মোহনবাগানের খেলোয়াড় হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই সময় নাগরপুর থানার ধুবুরিয়া নিবাসী মোশারফ হোসেনও মোহনবাগানের একজন কৃতী খেলোয়াড় ছিলেন। এদের সমসাময়িক সময়ে কলকাতা ইষ্ট বেঙ্গল ও কালী ঘাট টীমে খেলতেন টাঙ্গাইলের কিছু কৃতী খেলোয়াড়। এরা হলেন এলামীনের খোকা সাহা, গোপালপুর থানার মাকলা গ্রামের মাখন ঘোষ, নাগরপুরের ডাকরা নিবাসী অমূল্য ভট্রাচার্য ভাদ্রা গ্রামের গনেশ ভট্রাচার্য, মির্জাপুরের ননী গোসাই প্রমুখ খেলোয়াড় বৃন্দ। মোহামেডানে খেলতেন টাঙ্গাইলের অপর একজন কৃতী খেলোয়াড় মহিউদ্দিন। চল্লিশ দশকের কৃতী খেলোয়াড়দের মধ্যে আছেন ঝাড়ু চক্রবর্তী, অমলেশ নিয়োগী বলটু চৌধুরী, রামা কর্মকার, বাসাইলের লেবু মিঞা, করটিয়া ঠান্ডু মিঞা, হোসেন চেীধুরী, ভাদ্রা গ্রামের ইউসুফ মিঞা ও টাঙ্গাইলে মধু সাহা, গোপাল ঘোষ, রমনী সরকার, মাধব চৌধুরী, মাধব ঘোষ, সুকুমার নিয়োগী, কানাই সরকার, বিশু ব্যানাজী, দীনেশ নন্দী ও সুরুজ নিবাস খবির মিঞা। আরো আছেন কালীদাশ চক্রবর্তী, বিরু চক্রবর্তী, ফটিক রায় ও করটিয়ার খোকা চেীধুরী।
চল্লিশের দশকে বিশেষ করে ১৯৪৭ইং সনের পর থেকে টাঙ্গাইলের ফুটবল আরো বেশী জমকালো হয়ে উঠে। এ সময় মুসলিম রেনেসাঁ ক্লাব অগ্রনী ক্লাব, টাউন ক্লাব, ওয়াইনেস ক্লাব, উদয়ন ক্লাব প্রভ’তি ক্লাব গুলো উপহার দেয় কিছু কৃতী খেলোয়াড়। এদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম তালুকদার, লালা মিয়া, মালা মিয়া, কাশিল নিবাসী মিঞ্জু মিয়া, আবদুস সালাম, রঘুনাথ, নুনিয়া, ধুবুরিয়ার ভানু, মজদইন মল্লিক, সুনীল দেব, আমিনুজ্জামান মিন্টু, নরেশ পাল, ফরিদ মিয়ার নাম উল্লেখ যোগ্য। টাঙ্গাইলের কৃতী খেলোয়াড়দের মধ্যে আরো আছেন বিশ্বনাথ পাল, ভবানী, নরেশ সোম, সম্বল ভেীমিক বিবেকান্দ, রতু নাগ, গোসাই, বালু মিয়া, পিয়ারা, আবদুস সামাদ খান, আকরাম তালুকদার, সুরুজের মরহুম হারুন এবং নিমাই ঘোষ।
পরবর্তী কালে আধুনিক ফুটবলের কিছু কৃতী খেলোয়াড় উপহার দেয় পাক ইয়ং ক্লাব এবং ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাব। এরা হলেন আমিরুল ইসলাম খান, নজরুল ইসলাম খান, ফারুকুল ইসলাম খান ভাতৃত্রয়, সামছু, মিজানুর রহমান, সাদ উদ্দিন আহমেদ বাবু, হালিম, আতোয়ার রহমান, গোলাম রহমান ডল, সাইদুর রহমান ম্যাথন, কালীপদ রায়, নগেন রায়, রনজিৎ সরকার, স্বপন সরকার, জহর নিয়োগী, মনোজ কান্তি বিশ্বাস, দুলাল, পাপন, রাজ্জাক প্রমুখ। এরা টাঙ্গাইলের ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়। পাক আমলে টাঙ্গাইলে ফুটবল লীগ খেলার সাথে সাথে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অনুষ্ঠিত হতো। এ ব্যাপারে মরহুম আজগর খান সাহেবের অবদান স্বরনীয় হয়ে আছে। তিনি টাঙ্গাইলের খেলাধুলায় বিশেষ করে ফুটবলের উন্নতির জন্য যথার্থ সহায়তা করে গেছেন। তিনি দুইটি টুর্নামেন্ট পরিচালনা করেছেন। এগুলো হচ্ছে“ রিজিয়া মেমোরিয়াল কাপ” ও “আরফান খান চ্যালেঞ্জ গোল্ড শীল্ড” এবং ক্লাবকে তিনি আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করেছেন। টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক নগেন বাবু, রেনেসাঁ ক্লাবের বাচ্চু ভাই ও যতীন বাবুর অবদান অনেক। এ ছাড়া পাক ইয়ং স্পোটিং ক্লাব, মোহামেডান ক্লাব,ইয়ং স্পোটিং ক্লাব ও ইয়ং পাইওনিয়ার ক্লাবের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠায় আমিরুল ইসলাম খান, নজরুল ইসলাম খান ও ফারুকুল ইসলাম খান ভাতৃত্রয়ের অবদান টাঙ্গাইলের ক্রীড়া জগৎকে অনেক খানি এগিয়ে নিয়ে গেছে। পরবর্তী কালে সুষ্ঠ পরিচালনা ও উৎসাহী লোকের অভাবে ফুটবল টুর্নামেন্ট গুলো বন্ধ হয়ে যায়।
এতে করে ক্রীড়ামোদী মহল ঝিমিয়ে পড়ে। ফুটবলের ঝিমিয়ে পড়া ভাব দূর করতে এগিয়ে আসেন জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি এইচ.এম, মাছুদ, অতিরিক্ত মহকুমা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর হোসেন আকন্দ প্রমুখ ক্রীড়া উৎসাহী ব্যক্তিগন। জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপের মাধ্যমে নবজাগরণ সৃষ্টি করেন জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল ইসলাম। যদিও ৭০ দশকের মাঝামাঝিতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সন্তান খোরশেদ আলম বাবুল জাতীয় এবং ঢাকা মোহামেডান ও আবাহনীতে খেলে মাঠ মাতিয়েছেন। আর ৮০ দশকে মরহুম মির্জাপুর উপজেলার আদাবাড়ী গ্রামের মরহুম মোস্তাক আহমেদ, গোলাম রব্বানী ছোটন, আনন্দ, সোলায়মান মিঞা, সামছু, আতাহার বাবু, সাখাওয়াত হোসেন, ৯০ দশকে শাহ আলম বাবু, আংগুর, রঞ্জু, অঞ্জন, শহিদুল আলম রঞ্জন, পিযুষ নন্দী, সাদেকুল ইসলাম উত্তম, জাহিদুর রহমান কাকন, সাইফুল ইসলাম সাইফ, শিমুল, নাজিম, শিল্পী আক্তার, আগুর , গোবিন্দ চন্দ্র, ইউসুফ আলী খান ও বজলু। এখানে ৯০ দশকে পিযুষ নন্দী, উত্তম একত্রে ইয়ংমেন্স ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবে খেলে ৯১ সালে ফেডারেশন ক্লাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এবং খেলেছেন জাতীয় দলে। পিযুষ নন্দী ব্রাদার্স ইউনিয়ন ত্যাগ না করলেও সাদেকুল ইসলাম উত্তম ঢাকা মোহামেডানে কয়েক বছর খেলেছেন। এ সময় জাতীয় দল তথা টাঙ্গাইলের দ্রত গতি উইংগার শহিদুল ইসলাম রঞ্জন জাতীয় ছাড়াও মোহামেডানের গুরুত্বপূর্ন ফুটবলার ছিলেন। ১৯৯১ সালে টাঙ্গাইলে আকুরটাকুর পাড়ার মধ্যমাঠের কুশলী ফুটবলার মা ও মনি গোল্ডকাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঢাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ক্লাবে এক যুগ খেলেছেন। সবচেয়ে বেশী সময় ফুটবলে ছিলেন রাইটব্যাক গোবিন্দ চন্দ্র। ঢাকা মোহামেডানের পাশাপাশি তিনি ছিলেন ইয়ংমেন্সের পরীক্ষিত ফুটবলার। আরেক জন ফুটবলার কথা বলতে হয়,তিনি ভূয়াপুর অজুর্না ইউনিয়নের জগতগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশা খান। তিনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা ফায়ার সার্ভিস, আজাদ স্পোটিং, ধানমন্ডি, ভিক্টোরিয়া, ওয়ান্ডারার্স ও ওবায়দা খেলেছেন সুনামের সাথে। জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। খেলেছেন টাঙ্গাইল জেলা দলে নিয়মিত। রেলমন্ত্রনালয়ের ডেপুটি পরিচালক ছিলেন ২০১৫ সালে অবসর নেন। পায়ে ব্যাথা পেয়ে খেলা ত্যাগ করেন।
বর্তমানে টাঙ্গাইলের ফুটবল ভালো অবস্থায় থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য সেরকম ভাবে ভালো ফুটবলার উঠে আসছে না। বিশ্বে ক্রিকেটে জনপ্রিয় বাংলাদেশ, পথে ঘাটে আগে দেখা যেত ফুটবল নিয়ে মাতামাতি। কিন্তু এখন দেখা সর্বত্র ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতি। এখন ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে হলে বেশী বেশী টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। ক্রিকেটের পাশাপাশি স্কুল পর্যায়ে ফুটবলের উপর জোর দিতে হবে। তবেই নতুন ফুটবলার উঠে আসবে। ক্রিকেটের মতো ফুটবল শিখতে, খেলতে অনেক খরচ কম। তাই ফুটবলে জোর দিলেও আর্থিক দিকে দিয়ে যারা দূর্বল তারা ফুটবলে উঠে আসবে।
বর্তমান জাতীয় দলের তারকা স্টাইকার সুমন রেজা বলেন“ টাঙ্গাইলের ফুটবলারদের এগিয়ে যাওয়া পিছনে রয়েছে তাদের প্রতিভা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম। জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি নিয়মিত বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট চালু করতে পারে, তবেই নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসবে এবং তাদেরকে ভালো মানের কোচ দিয়ে তিন মাসব্যাপী ক্যাম্পিং করাতে হবে। তবে সাফল্য ধারাবাহিক উঠে আসবে”। বর্তমান জাতীয় দল ও ঢাকা বসুন্ধরা কিংসে নির্ভরযোগ্য রক্ষণসেনা বিশ্বনাথ বলেন“ অক্লান্ত পরিশ্রম এবং ভালো মানের প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্ট খেলে নিজেদের তৈরী, সাফল্য আসবেই”। এক সময়ের তারকা ফুটবলার গোবিন্দ চন্দ্র বলেন“ তৃনমূল পর্যায়ে ফুটবলার খুঁজে বের করে ভালো মানের কোচ এবং মাসব্যাপী অনুশীলনের পর বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহনের ব্যবস্থা করতে পারলে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। এছাড়া পরিশ্রমী ফুটবল খেলার জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, এতে তাদের ফিটনেস মজবুত হবে”। সাবেক জাতীয় দল ও ঢাকা মোহামেডানের দ্রুত গতির উইংগার শহিদুল ইসলাম রঞ্জন বলেন“ প্রতিভার পাশাপাশি নিয়মিত ভালো মানের কোচের প্রশিক্ষনই ফুটবলকে এগিয়ে নিবে। এ জন্য টাঙ্গাইলের সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করে তাদের সহযোগিতা নিলে ফুটবল আরো এগিয়ে যাবে। ” বর্তমান জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন“ নিয়মিত ফুটবল লীগের পাশাপাশি জেলা ও বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে হবে। ভালো মানের কোচ তৈরী করতে হবে। কোচ জামিল ভাইয়ের মতো ফুটবলে আন্তরিক হতে হবে। জামিল ভাইয়ের মতো কোচ হারিয়ে গেলে টাঙ্গাইলের ফুটবল হারিয়ে যেতে পারে বলে আমি মনে করি”।
টাঙ্গাইল ফুটবল এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাজী জাকেরুল মওলা বলেন“ মাঠের সল্পতা ও আর্থিক সমস্যার কারনে টাঙ্গাইলে সঠিক মতো ফুটবল টুর্নামেন্ট লীগ আয়োজন করা হয় না। আমরা ফুটবল খেলার জন্য মাঠটি ৩ মাসের জন্য পাই। যা বিভিন্ন কারনে সঠিক সময়ে পাই না। সঠিক সময়ে পেলে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায়। এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গণি অলোয়া ও জার্মুকী কিংবা পাকুল্যা এলাকার খাস জমিতে দুটি স্টেডিয়াম তৈরী ব্যাপারে ভূমি অফিসে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য, যদি বরাদ্দ দিয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সেখানে দুটি স্টেডিয়াম তৈরী করে দিবে, এছাড়া ক্রিকেটের জন্য আলাদা স্টেডিয়ামও হবে। গ্রাম পর্যায়ে ভালো ভালো মাঠ দেখে টুর্নামেন্ট ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে ফুটবল ও ক্রিকেট উভয় খেলায় টাঙ্গাইল এগিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।” আমরা ফুটবলে সারাদেশের তুলনায় এগিয়ে আছি, টাঙ্গাইলের ৬ জন ফুটবলার জাতীয় দলে খেলছে এবং আগামীতেও ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে আশাকরি। মাঠে দর্শকের ব্যাপারে বলেন“ গ্রাম অঞ্চলে ফুটবল খেলা হলে প্রচুর দর্শক হয়। কিন্তু স্টেডিয়ামে ফুটবল দেখতে মাঠে আসেন না। এটা শহরের দর্শকদের মনোমানসিকতা কম। তারা বিশ্ব ফুটবল সাথে ঘরোয়া ফুটবলকে এক করে ফেলেন যা আদ্যে ঠিক নয়, এছাড়া ফুটবল খেলার বিনোদনে অংশ না নিয়ে মোবাইলে বিনোদন খুঁজে। এসব কারনেই শহরের মাঠে দর্শক উপস্থিতি কম। ”
টাঙ্গাইলে পুরুষ ফুটবলারদের পাশাপাশি প্রমিলা ফুটবল অনেক এগিয়ে গেছে। টাঙ্গাইলে মোনালিসা উইংমেন্স স্পোর্টস নামে একটা ফুটবল ক্যাম্প আছে। যেখানে স্কুল শিক্ষিকা মুন্নি আক্তার গরীব ও মেধাবী কিশোরীদের ফুটবলারদের আহবান করে ওদের নিয়ে চমৎকার ফুটবল খেলছেন। এছাড়া গোপালপুরের গোলাম রহমান বাপন পুরুষ ফুটবলারদের পাশাপাশি প্রমিলা ফুটবলারদের নিয়ে কোচিং করাচ্ছেন। বাপনের বড় ভাই বাংলাদেশ জাতীয় প্রমিলা ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। এছাড়াও ফুটবলে রনজিৎ, শিপনসহ অনেকেই ফুটবল কোচিংকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার বছরব্যাপী খেলাধূলার আয়োজন যদি থাকে তাহলে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন খেলাধূলার পাশাপাশি ফুটবল আরো এগিয়ে যাবে। একসময় বাংলাদেশ জাতীয় দলে নারায়নগঞ্জ জেলার ফুটবলারদের আধিপত্য ছিলো, যা এখন টাঙ্গাইলের ফুটবলারদের দখলে। এ অবস্থা সবসময় বিরাজমান হউক এটা টাঙ্গাইলবাসীর কামনা।
টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে নিয়মিত ফুটবল লীগ না হলেও সর্বশেষ ২০২১ সালে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দীর্ঘদিন পর মুসলিম রেনেসাঁ ক্লাব ও ইয়ুথ ক্লাব। ২০২০ সালে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব, ২০১৯ সালে টাঙ্গাইল পুলিশ দল, ২০১৮ সালে ইয়ুথ ক্লাব, ২০১৭ সালে থানাপাড়া ইলেভেন বুলেটস ক্লাব।
এম.কন্ঠ/ ২৯ অগাস্ট /এম.টি