ঢাকা ০৬:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ
বাসাইলে হেলমেট ও লাইসেন্স না থাকায় ৩ হাজার টাকা জরিমানা বাসাইলে প্রবাসবন্ধু ফোরামের আলোচনা সভা ঈদে ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজট নিরসনে মতবিনিময় সভা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন শীর্ষক শিক্ষকদের কর্মশালা বাসাইলে প্রান্তিক পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সেমিনার ঘাটাইলে মাটি কাটার দায়ে দুই জনকে কারাদন্ড টাঙ্গাইলে কৃষক হত্যায় মা মেয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড টাঙ্গাইলে আ.লীগের পক্ষে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল, গ্রেফতার ১১ টাঙ্গাইলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পার্টনার কংগ্রেস ছাত্রদল নেতা সাম্য’র হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বাসাইলে অবস্থান কর্মসূচী

বাসাইলে ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে রাস্তা বন্ধ, যান চলাচলে চরম ভোগান্তি

মোজাম্মেল হক :
প্রকাশ: ১২:৪৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিলপাড়ার বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙে হাফ কিলোমিটার রাস্তা বন্ধ। যানচলাচল ছাড়াও পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে আছে। দীর্ঘদিন যাবত ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙে ভাঙ্গারাস্তার পাশের কৃষিজমি ভাঙ্গার পর এখন বসতবাড়ি ভাঙ্গার উপক্রম।

ভাঙ্গা রাস্তার পাশে বসতবাড়ির মজনু মিয়া স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, নদীর পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাদের জমিতেই রাস্তা তৈরী হইছে। রাস্তায় চলে যাওয়া সেই কৃষিজমিসহ আমাদের বসতবাড়ি ভাঙ্গা শুরু হইছে। রাস্তার পাশে একটি ঘর আছিল। নদীর পাড় ভাঙ্গার কারনে সেই ঘরটি ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নদীর ভাঙ্গন রুখতে অনেক জিওব্যাগের বস্তা আনছিলো। কিছু কাজ করে জিওব্যাগ ফিরত নিয়া গেছে আমরা দেখছি। ভালাইলে কাজ করে নাই, এ তারিখে যে ভাঙ্গছে, কোন পদক্ষেপ নিতাছে না। আমরা এখন বাড়তেই থাকতে পারুম না।


তিনি আরো বলেন, একটা জমির উপর চারবার রাস্তা দিছি। এই তারিখে যদি ভাঙ্গাইয়া জায়গা তাইলে আমার থাকার জায়গা থাকব না। আমার বাড়ীর সীমানায় এখন রাস্তা। নদীর ভাঙ্গন রোধে এরপর উপযুক্ত কোন পদক্ষেপও গ্রহন করেনি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।

টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে “বিলপাড়ার মিষ্টি”র জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে যান চলাচল এখন বন্ধ। নদী থেকে ভাঙা সুরু রাস্তার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। দিনের বেলায় পথচারীরা সাবধানে হেঁটে চলাচল করতে পারে। রাতের অন্ধকারে বৈদ্যুতিক আলোবিহীন রাস্তায় প্রতিদিনই পথচারীরা হোঁচট খেয়ে ঝিনাই নদীর বিশাল খাদে পড়ে মারান্তকভাবে আহত হচ্ছে। দিনের বেলায় মোটরসাইকেলের আরোহীরাও বিশাল খাদে পড়ে হাত পাঁ ভেঙ্গে গেছে, সেটাও সরেজমিনে জানা গেছে।

আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত আজিজুল হক মাস্টার বলেন, দীর্ঘদিনের কাঁচা প্রশস্থ নদী পাড়ের পথটি ভেঙ্গে যাওয়ায় মানুষজন চলাচল করতে পারছে না। এই পথে মির্জাপুর, বাসাইল ও সখিপুরের শতশত মানুষ পিকাব, সিএনজি, মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতো। মিষ্টির জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া বাজার এই অঞ্চলের একমাত্র বড়বাজার। সবাই এই বাজারে বেচাকেনা করে। কিন্তু পথটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চরম বেকদায় পড়েছে।

আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুর রহমান বলেন, পাকিস্থানী আমলে নদীর মাঝ পর্যন্ত কৃষিজমি ছিলো। সেটা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মজনু মিয়ার সীমানায় রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়া আমরা সবসময় চলাচল করি। এই রাস্তা দিয়া বাসাইল হইয়া টাঙ্গাইল যাই। এই রাস্তার মেরামত খুবই জরুরী। এছাড়া নদী ভাঙ্গনে চকের জমিও চলে যাইতেগা।

কাজিরাপাড়া গ্রামের আবু বকর বলেন, আদাজান বিলপাড়া(ঝিনাই নদী) নদীর ভাঙ্গনে আমরা বিপর্যস্থ। নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ ভাঙ্গনে আমাদের রাস্তাসহ গ্রামের কৃষিজমি ভাঙ্গনে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। সারা বছরই ঝিনাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাই নদীর ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। যেটা নদীর পাড় ভাঙনে বড় সমস্যা। আমরা কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন বলেন, হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা চলে আসছে। সহযোগিতা হচ্ছেন স্থানীয় আবুল হোসেন, করীম মেম্বার, বিশু, হাবিবুর রহমানের ছেলে জাহিদ, অহিদুল ইসলাম। এলাকার লোকজন বাঁধা দিলে বালু ব্যবসায়ীরা বলে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।


আদাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, দীর্ঘকাল ধরে নদীর পাড়ের এই হাফ কিলোমিটার রাস্তা সংকটে আমরা আছি। আশে পাশের সব গ্রামের মানুষ বিলপাড়া বাজারেই বাজার করে। যে কারনে এই রাস্তা টুকু সংস্কার করা খুবই জরুরী।

মির্জাপুর থেকে আগত পথচারী ছাত্র সিফাত ও খন্দকার ইসমাইল হোসেন, আমরা প্রায় মোটরসাইকেল যোগে মির্জাপুর থেকে বিলপাড়ার নেওয়াজ আলীর মিষ্টি খেতে চলে আসি। রাস্তা ভাঙ্গার কারনে আমাদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে আমরা কয়েকবার জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে চেষ্টা করেছি। তারপরও ভাঙ্গন ঠেকাতে পারিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি দ্রুত ঝিনাই নদীর পাড় বেঁেধ নদীর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করবেন।

 

 

এম.কন্ঠ/ ২৪ ডিসেম্বর /এম.টি

নিউজটি শেয়ার করুন

বাসাইলে ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে রাস্তা বন্ধ, যান চলাচলে চরম ভোগান্তি

প্রকাশ: ১২:৪৩:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিলপাড়ার বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙে হাফ কিলোমিটার রাস্তা বন্ধ। যানচলাচল ছাড়াও পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে আছে। দীর্ঘদিন যাবত ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙে ভাঙ্গারাস্তার পাশের কৃষিজমি ভাঙ্গার পর এখন বসতবাড়ি ভাঙ্গার উপক্রম।

ভাঙ্গা রাস্তার পাশে বসতবাড়ির মজনু মিয়া স্ত্রী রিনা বেগম বলেন, নদীর পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাদের জমিতেই রাস্তা তৈরী হইছে। রাস্তায় চলে যাওয়া সেই কৃষিজমিসহ আমাদের বসতবাড়ি ভাঙ্গা শুরু হইছে। রাস্তার পাশে একটি ঘর আছিল। নদীর পাড় ভাঙ্গার কারনে সেই ঘরটি ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নদীর ভাঙ্গন রুখতে অনেক জিওব্যাগের বস্তা আনছিলো। কিছু কাজ করে জিওব্যাগ ফিরত নিয়া গেছে আমরা দেখছি। ভালাইলে কাজ করে নাই, এ তারিখে যে ভাঙ্গছে, কোন পদক্ষেপ নিতাছে না। আমরা এখন বাড়তেই থাকতে পারুম না।


তিনি আরো বলেন, একটা জমির উপর চারবার রাস্তা দিছি। এই তারিখে যদি ভাঙ্গাইয়া জায়গা তাইলে আমার থাকার জায়গা থাকব না। আমার বাড়ীর সীমানায় এখন রাস্তা। নদীর ভাঙ্গন রোধে এরপর উপযুক্ত কোন পদক্ষেপও গ্রহন করেনি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।

টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে “বিলপাড়ার মিষ্টি”র জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙ্গে যান চলাচল এখন বন্ধ। নদী থেকে ভাঙা সুরু রাস্তার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। দিনের বেলায় পথচারীরা সাবধানে হেঁটে চলাচল করতে পারে। রাতের অন্ধকারে বৈদ্যুতিক আলোবিহীন রাস্তায় প্রতিদিনই পথচারীরা হোঁচট খেয়ে ঝিনাই নদীর বিশাল খাদে পড়ে মারান্তকভাবে আহত হচ্ছে। দিনের বেলায় মোটরসাইকেলের আরোহীরাও বিশাল খাদে পড়ে হাত পাঁ ভেঙ্গে গেছে, সেটাও সরেজমিনে জানা গেছে।

আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত আজিজুল হক মাস্টার বলেন, দীর্ঘদিনের কাঁচা প্রশস্থ নদী পাড়ের পথটি ভেঙ্গে যাওয়ায় মানুষজন চলাচল করতে পারছে না। এই পথে মির্জাপুর, বাসাইল ও সখিপুরের শতশত মানুষ পিকাব, সিএনজি, মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতো। মিষ্টির জন্য বিখ্যাত বিলপাড়া বাজার এই অঞ্চলের একমাত্র বড়বাজার। সবাই এই বাজারে বেচাকেনা করে। কিন্তু পথটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চরম বেকদায় পড়েছে।

আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুর রহমান বলেন, পাকিস্থানী আমলে নদীর মাঝ পর্যন্ত কৃষিজমি ছিলো। সেটা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে মজনু মিয়ার সীমানায় রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়া আমরা সবসময় চলাচল করি। এই রাস্তা দিয়া বাসাইল হইয়া টাঙ্গাইল যাই। এই রাস্তার মেরামত খুবই জরুরী। এছাড়া নদী ভাঙ্গনে চকের জমিও চলে যাইতেগা।

কাজিরাপাড়া গ্রামের আবু বকর বলেন, আদাজান বিলপাড়া(ঝিনাই নদী) নদীর ভাঙ্গনে আমরা বিপর্যস্থ। নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণ অংশ ভাঙ্গনে আমাদের রাস্তাসহ গ্রামের কৃষিজমি ভাঙ্গনে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। সারা বছরই ঝিনাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাই নদীর ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। যেটা নদীর পাড় ভাঙনে বড় সমস্যা। আমরা কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন বলেন, হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা চলে আসছে। সহযোগিতা হচ্ছেন স্থানীয় আবুল হোসেন, করীম মেম্বার, বিশু, হাবিবুর রহমানের ছেলে জাহিদ, অহিদুল ইসলাম। এলাকার লোকজন বাঁধা দিলে বালু ব্যবসায়ীরা বলে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে।


আদাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, দীর্ঘকাল ধরে নদীর পাড়ের এই হাফ কিলোমিটার রাস্তা সংকটে আমরা আছি। আশে পাশের সব গ্রামের মানুষ বিলপাড়া বাজারেই বাজার করে। যে কারনে এই রাস্তা টুকু সংস্কার করা খুবই জরুরী।

মির্জাপুর থেকে আগত পথচারী ছাত্র সিফাত ও খন্দকার ইসমাইল হোসেন, আমরা প্রায় মোটরসাইকেল যোগে মির্জাপুর থেকে বিলপাড়ার নেওয়াজ আলীর মিষ্টি খেতে চলে আসি। রাস্তা ভাঙ্গার কারনে আমাদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে আমরা কয়েকবার জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকাতে চেষ্টা করেছি। তারপরও ভাঙ্গন ঠেকাতে পারিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি দ্রুত ঝিনাই নদীর পাড় বেঁেধ নদীর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করবেন।

 

 

এম.কন্ঠ/ ২৪ ডিসেম্বর /এম.টি