পাখিদের খাবার জোগার করা নেশা গোলজারের
সাইফুল ইসলাম, গোপালপুর: প্রকৃতিকে পূর্ণতা দান করেছে পাখি ও উদ্ভিদ। পাখি ছাড়া প্রকৃতির সৌন্দর্য একেবারেই বেমানান। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খুব বেশি দরকার পাখির অভয়ারণ্য তৈরি।
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার চর চতিলা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোলজারের রুটি, পরোটার দোকানের সামনে শুরু হয় পাখির কিচিরমিচির শব্দ। তীব্র শীতের সকালেও টিনের চালে ও গাছের ডালে খাবারের অপেক্ষা করতে থাকেন কয়েকশ শালিক, টুনটুনি, বুলবুলি, কাকসহ দেশীয় প্রজাতির পাখি ।
পার্শ্ববর্তী হাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. গোলজার হোসেন (৬০) ফজর নামাজ আদায় শেষে দোকান খুলেই আগেরদিনে রেখে যাওয়া রুটি পরোটা, ময়দা ছিড়ে রাস্তায় ছিটিয়ে দিতে থাকেন । এতে পাখিগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে দলবেঁধে এসে খাওয়া শেষে চলে যায় ।
গোলজার হোসেন বলেন, শীতকালে ২৫০-৩০০পাখি প্রতিদিন ভোরে অপেক্ষা করে খাবারের জন্য, গরমকালে এর পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। ওদের জন্য আগের দিন ৮-১০টি রুটি রেখে দেই। এতে না হলে ময়দা গুলানো থাকে সেগুলো দেই। মাসিক ৩হাজার টাকার বেশি ব্যয় হলেও, এগুলো আমার লোকসান মনে হয় না বরং ভালোবেসে খাবার দেই। কোন কারনে দোকান খুলতে না পারলে অন্যজনের কাছে খাবার রেখে যাই পাখিদের খাওয়ানোর জন্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৭বছর ধরে এভাবেই নিয়মিত খাবার দিয়ে থাকেন তিনি। পাখিকে খাবার দিতে দেখে আমরাও আনন্দিত হই। পাখির কেউ কোন ক্ষতি করে না।
অটো রিকশা চালক শামীম হাসান জানান, প্রতিদিন ভোরে তিনি পাখিকে রাস্তায় খাবার দেন। পাখি খাওয়ার সময় পথচারীরা সাবধানে ভ্যান, রিকশা, সাইকেল চালিয়ে যায়।
চর চতিলা বাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত ফজর নামাজ আদায় শেষে বাড়ি ফেরার সময় ঝাঁকবেঁধে শতাধিক পাখিকে খাওয়াতে দেখি। এতে দেখতেও খুব সুন্দর লাগে, এটা সওয়াবের কাজ। দীর্ঘদিন ধরেই গোলজার হোসেন পাখিকে খাবার দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃক্ষপ্রেমী ডা. আবু সাঈদ বলেন, নিয়মিত পাখিকে খাবার দেওয়া নিশ্চয়ই প্রাণিকূলের তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তবে পরিবেশ রক্ষায় পাখির অভয়ারণ্য তৈরি করা জরুরী দরকার। পাখিরা মুক্ত আকাশে মুক্তভাবে উড়বে এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম। এই সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। তার পাখিকে খাওয়ানোর অনেক দৃশ্য আমার মুঠোফোনে ধারন করা আছে।